রাজধানীর ফার্মগেটের পাবলিক টয়লেটে ফুটফুটে এক ছেলে শিশুর জন্ম হয় । মা ও শিশু দুজই সুস্থ্য আছে। জন্মের পর পাবলিক টয়লেট থেকে বের করে শিশুটিকে শুইয়ে রাখা হয় ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল সংলগ্ন ওভারব্রিজের নিচের ফুটপাতে। ওই ফুটপাতেই থাকেন মা ইতি ও বাবা সোহেল রানা। ওই দম্পতির কোনো ঘর-বাড়ি নেই। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশুটির জন্ম হয় রাজধানীর ফার্মগেটের এক পাবলিক টয়লেটে। কেন হাসপাতালে নিতে চাননি জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন, তিন বছর আগে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার একটি হাসপাতাল থেকে তাঁদেরই সদ্যোজাত এক ছেলে শিশুকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল চিকিৎসা দেওয়ার নামে। শিশুটি জন্ম নেওয়ার পর মায়ের হাতে ৫০০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফার্মগেটের ওই ফুটপাতের ওপর সকাল থেকে প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন ইতি। এই দৃশ্য দেখেও স্বামী সোহেল রানা তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে নিতে চাননি। চেয়েছিলেন ফুটপাতেই জন্ম নিক তাঁর সন্তানটি। কিন্তু রাস্তায় অধিক মানুষ থাকায় আনন্দ সিনেমা হলের পাশের পাবলিক টয়লেটে প্রসব করানো হয় ইতিকে। বলছিলেন হাসি-খুশি থাকা বাবা সোহেল। ওই হাসপাতালে ইতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক নারী। তিনিই মাঝেমধ্যে খোঁজ-খবর রাখতেন। ওই নারী ইতিকে বলেছিলেন, সন্তান প্রসবে কোনো টাকা লাগবে না। চিকিৎসার সব ব্যবস্থা তিনি করবেন। অর্থ-কষ্টে থাকার কারণে ওই প্রলোভনে পা দিয়েছিলেন বলে জানালেন ইতি। কিন্তু এই খবর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি সোহেল। অনেক কষ্টে ওই প্রতিষ্ঠানটি খুঁজে সোহেল রানা গিয়েছিলেন সেখানে। যাওয়ার পর সোহেল রানাকে বলা হয়েছিল, শিশুটিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে আর পাওয়া যাবে না। কোনো উপায় না থাকায় সেদিন হতাশ হয়ে ফিরেছিলেন বাবা সোহেল। আজ দুপুরে ওভারব্রিজের নিচের ফুটপাতে শিশুটির পাশে বসে ছিল সোহেল ও ইতি। শিশুটির কপালে চুমো দিতে দিতে ইতি এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘আমার আগের সন্তানটিকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল আমার বুক থেকে। এবার মরে গেলেও আমি আমার সন্তানকে কাছে রাখতে চাই। আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা সবাই খুশি। রাস্তার মানুষসহ আমাদের পরিচিত অনেকেই খুশি হয়েছে।’
শিশুটিকে যখন রাস্তায় শুইয়ে রাখা হয়েছিল তখন অনেকেই দেখতে আসছিল তাকে। সে সময় কেউ টাকা, কেউবা জামা-কাপড় উপহার দিচ্ছিল। শিশুটিও তাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছিল। সে সময় পাশ থেকে একজন বলে ওঠেন, ‘রাস্তায় এত সুন্দর ফুটফুটে শিশু। আমারও এদের সঙ্গে থেকে যেতে ইচ্ছে করছে। যে পাবলিক টয়লেটে শিশুটির জন্ম ওই টয়লেটের তদারকির দায়িত্বে থাকা জুঁথি বেগম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘রাস্তার প্রসব ব্যথা ওঠে ইতির। তারপর আমরা টয়লেটের ভেতরে আনি। এখানেই ছেলেটির জন্ম হয়েছে। সোহেল রানার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। ১০ বছর বয়স থেকেই সোহেল ঢাকার ফুটপাতে থাকেন। সোহেল রানার বয়স ২২ বছর হলেও স্ত্রী ইতির বয়স ৩৫ বছর। ইতির বিবাহ বিচ্ছেদ হলে পাঁচ বছর আগে সোহেল তাঁকে বিয়ে করেন। তারপর থেকে ফুটপাতে তাদের সুখ-দুঃখের সংসার। তাঁরা দুজনই বলছিলেন, ভালো আছেন তাঁরা এবং সারা জীবন এভাবেই থাকতে চান। কিন্তু তাঁদের দুজনেরই আক্ষেপ হচ্ছে সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে। ইতি বলছিলেন, ‘আমাদের কেটে যাবে। কিন্তু আমার ছেলেকে নিয়ে চিন্তায় আছি। আমি ওকে লেখাপড়া শেখাতে চাই। কিন্তু আমাদের টাকা নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। কেউ যদি আমার ছেলের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয় আমি আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য দোয়া করব।’ একই কথা বলছিলেন সোহেল রানাও। সুত্রঃ এনটিভি