তিন কোটি ৪০ লাখ টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে মামলা করা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান-২ ফুড পান্ডার কার্যালয়ে আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানায় ভ্যাট গোয়েন্দা। অভিযানে ফুডপান্ডার বিক্রয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ মিলে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভুল সেবা কোড ব্যবহার, প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন এবং উৎসে কর না দেওয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হবে। ফুডপান্ডার প্রকৃত সেবার কোড এস-০৯৯.৬০। এই কোডের আওতায় ভ্যাট ৫ শতাংশ এবং বাড়ি ভাড়ার উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার থেকে জব্দকৃত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি ও এপ্রিল মাসে মোট ২৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৭ টাকার বিক্রয় তথ্য পাওয়া যায়। এই একই সময়ে প্রতিষ্ঠান স্থানীয় গুলশান ভ্যাট সার্কেলে দাখিলপত্রে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৯৭২ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, প্রতিষ্ঠানটি গত আট মাসে মোট ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৫ টাকা বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে, যার উপর ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৫৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬২০ টাকা প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠানটি সেবার কোড এস-০৯৯.১০ এর আওতায় অসঙ্গতিপূর্ণ নিবন্ধন নেওয়ায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা এ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ার উপর কোন ভ্যাট পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দকৃত সিএ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে, যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২৯ লাখ ৬ হাজার ২৬ টাকা। এছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ের জব্দকৃত ভাড়ার চুক্তি মোতাবেক বাড়ি ভাড়া বাবদ ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে, যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাড়ি ভাড়া বাবদ মোট ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।
এই বাড়ি ভাড়ার ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ বর্তায় ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৯২০ টাকা। এছাড়া দাখিলপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি লিমিটেড কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও পণ্য ক্রয়ের উপর কোন উৎসে মূসক পরিশোধ করেনি। জব্দকৃত সিএ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ হতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উৎসে মূসক বাবদ ১ কোটি ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৩ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এই উৎসেকর যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ হিসেবে ৭২ লাখ ১২ হাজার ৭১৯ টাকা প্রযোজ্য। ফুডপান্ডা বাংলাদেশ লিমিটেড পণ্য বিক্রয় বাবদ ৫৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা, বাড়িভাড়া বাবদ ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৬ টাকা এবং উৎসে কর কর্তন বাবদ ১ কোটি ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৩ টাকাসহ মোট ২ কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৬৫৩ টাকা ভ্যাট দেয় নি। এই না দেওয়া ভ্যাট এর উপর সুদ বাবদ ১ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার ২৬০ টাকা প্রযোজ্য হবে। প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত।