Monday, November 4, 2024
Homeআইন-আদালতনির্বাচন কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা নজরদারিতে

নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা নজরদারিতে

নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি, সংশোধন, দ্বৈত ও রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের চার কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সার্চ করে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে একটি সংস্থা। যে কোনো সময় তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, ওই চার কর্মকর্তার আরও কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কিনা, তারা কার কার নামে সম্পদ করেছেন, সেসব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সার্চ করা হচ্ছে। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াত চক্রের পাঁচ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক গুরুপূর্ণ তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এতে ইসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। এই জালিয়াত চক্রের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে জড়িত অন্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সার্চ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাশ মিডিয়াকে বলেন, জালিয়াত চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যারা জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ নিয়েছিলেন, তাদের অ্যাকাউন্টের খবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন দেখা গেছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি, সংশোধন, দ্বৈত ও রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ইসির একটি বড় চক্র। এই চক্রে কাজ করছে ইসির সচিবালয়ের বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, কয়েকজন জেলা-উপজেলা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কিছু ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। তারা মাঠপর্যায়ে কর্মচারীদের মাধ্যমে বড় বড় সংশোধনীর কাজ নিয়ে থাকেন। এরপর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেই কাজ করে নেন। এসব কাজে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকাও লেনদেন হচ্ছে। এ ছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে সংশোধিত এনআইডি দিয়ে জাল দলিল, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা একাই জালিয়াতির কাজ করছেন না। তাদের নেপথ্যে রয়েছেন বড় কোনো গডফাদার। তবে এনআইডি জালিয়াতির তদন্ত হলে বড় বড় কর্মকর্তা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন কেনাকাটা, স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনের তফসিল দিয়ে আবারও নির্বাচন বন্ধ করা, ফলাফলের গেজেট, ফলাফল পাল্টানো, এনআইডির বড় বড় সংশোধনীর তদবির করে ইসির অনেকেই বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। ঢাকায় অনেকের বিঘায় বিঘায় জমিও আছে। তিনি বলেন, ইসির যুগ্ম-সচিব, উপ-সচিব, সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব তলব করলেই সব বেরিয়ে আসবে। ইসিতে চাকরি করে বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাট করা কঠিন কাজ। কিন্তু ইসির অসাধু কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে মোটা অঙ্কের টাকা কামাচ্ছেন।  ঘটছে জালিয়াতির ঘটনা : প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে দ্বিতীয় আরেকটি এনআইডি তৈরি করেন ডা. সাবরিনা শারমিন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। এই অভিযোগে ইসি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ছাড়া প্রতারক সেই সাহেদও দুটি এনআইডি তৈরি করেছিলেন। এর আগেও কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকশ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এরপরে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) জালিয়াতি ও দুর্নীতি বন্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অপতৎপরতায় সম্পৃক্ত এক ডজন কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখে কমিশন। সম্প্রতি ডিবির জালে একটি জালিয়াত চক্র ধরা পড়ে। ওই চক্রে ছিলেন মো. মজিদ, মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. সুমন পারভেজ, সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর  ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তাদের কাছে ১২টি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে সিদ্ধার্থ শংকর সূত্রধর ও আনোয়ারুল ইসলামকে ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশনের অধীনে খিলগাঁও ও গুলশান অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে তারা সহজেই জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও সেন্ট্রাল সার্ভারে এন্ট্রি দিতে পারতেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া শহর থেকে এম এম ওয়াদুদ নামের এক ব্যক্তির বিপুল অঙ্কের টাকার সম্পত্তি এনআইডি জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেওয়া হয়। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এনআইডি জালিয়াতচক্রের অন্যতম হোতা আশরাফুজ্জামান সুজনকে। এ কাজে ইসির কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গত বছর রোহিঙ্গাদের এনআইডি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ ওঠে ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এই বছরের আগস্টে এক রোহিঙ্গা নারীর এনআইডি পাওয়াকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়। রোহিঙ্গাদের হাতে জাল এনআইডি তুলে দিয়ে দালালচক্র লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিত। দালালচক্রের সঙ্গে ইসির কর্মচারীর পাশাপাশি কর্মকর্তাদের নামও আসে আলোচনায়। সম্প্রতি মেহেরপুরের গাংনীতে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে। এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে দুজন উপ-পরিচালক এবং একজন সহকারী পরিচালককে বদলি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পরিচালক পদেও রদবদল হতে পারে। এ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াত চক্রের অপতৎপরতা নির্মূলে দেশজুড়ে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। ইতিমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন অফিসে অভিযান শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম গতকাল ‍মিডিয়াকে বলেন, এনআইডি উইং নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করছি। ইতিমধ্যে কয়েকজন অফিসারকে পরিবর্তন করা হয়েছে। আরও পরিবর্তন হবে। নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য