মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন
আমার বাবা ছিলেন মাধ্যামক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও মা ছিলেন বালিকা মাধ্যমিক স্কুলের সিনিয়র শিক্ষীকা। ছোট বেলা থেকে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতাম। পরীক্ষার সময় তারা দেখতাম ছাত্র-ছাত্রীদের নকল করার সময় নকল ছিনিয়ে নিতেন এবং তাদের বকা দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দিতেন। সেই থেকে আমি কোন প্রকার অন্যায় দেখলে সহ্য করতে পারতাম না। বর্তমানে প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করায় তেমন কোন সময় পাওয়া যায় না। তারপরও যতটুকু সময় পাই কোন প্রকার অনিয়ম দেখলে দু-কলম লিখতে বসি।
১৯৮৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে যখন অফুরন্ত সময় পেলাম তখন সাংবাদিক শাহ মোঃ গোলাম মাওলা ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তার কাছে সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি আমাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। এবং গোলাম মাওলা ভাইয়ের সহায়তায় সাংবাদিকতার প্রথম হাতেখড়ি। পরবর্তীতে আমার চাচাত ভাই আনজামুল আলম মুনীর ভোলার এক সময়ের প্রভাবশালী পত্রিকা অধুনাবিলুপ্ত দৈনিক ভোলাবানী পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। ভাইয়ের সহায়তায় সাংবাদিকতার ২য় হাতে খড়ি। এরপর এ এইচ এম বজলুর রহমান ভাই এর লেখাকে অনুকরন করে আমার সাংবাদিকতার নেশা শুরু হয়। প্রথমে সাপ্তাহিক ভোলাবানী ও সাপ্তাহিক দ্বীপবানী পরবর্তীতে বরিশালের দৈনিক প্রবাসী, দৈনিক আজকের বার্তা, দৈনিক বাংলার কন্ঠ, ঢাকার সাপ্তাহিক সৈনিক ও সাপ্তাহিক সুগন্ধা, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক মুক্তকন্ঠ পত্রিকার লালমোহন প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছি। বর্তমানে ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে কর্মরত আছি। পাশাপাশি দৈনিক ইত্তেফাকে মাঝে মাঝে লেখালেখি করি, দৈনিক নতুন সংবাদ এর সাথে যুক্ত আছি এবং বিপ্লবী সংবাদ.কম অনলাইন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হিসাবে যুক্ত আছি।।
২০০১ সালে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় আমার লেখা ” ধর্ষিতা নয় ধর্ষনকারীর ছবি পত্রিকায় ছাপা হউক” এই শিরোনামে একটি লেখা চিঠিপত্র বিভাগে প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটি প্রকাশিত হবার পর দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে চিঠির মাধ্যমে আমাকে বেশ কয়েকজন মহিলা পাঠক অভিনন্দন জানিয়েছিল। যা ছিল আমার লেখার স্বার্থকতা। আমার সেই ২০০১ সালের লেখা আজ প্রতিষ্ঠিত। ঢাকা শহরে হাউড্রোলিক হর্নের কারনে অতিষ্ঠ হয়ে, হাউড্রোলিক হর্ন বন্ধ করার জন্য একটি লেখা লিখেছিলাম যা দৈনিক কালবেলায় উপ-সম্পাদকীয়তে ছাপা হয়েছিল। হাউড্রোলিক হর্ন বন্ধ করার জন্য হাইকোর্টে এ ব্যাপারে একটি রায় হয়েছে। আমার এক বন্ধুর মা চরফ্যাশন হাসপাতালে চাকুরী করতেন। বদলী হবার পরও তার বেতন দীর্ঘ ৫ মাস ঘুষ না দেয়ার কারনে আটকে ছিল। আমি সাপ্তাহিক ভোলাবানীতে একটি সংবাদ লেখার কারনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বেতন চালু করতে বাধ্য হয়েছিল। আমার এক প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক যিনি ছিলেন লালমোহন সাব রেজিষ্ট্রি অফিস মসজিদের ইমাম, তার পেনশনের টাকা লালমোহন উপজেলা হিসাব শাখায় উৎকোচ কম দেয়ার কারণে আটকে ছিল, আমি জানতে পেরে উপজেলা হিসাব শাখায় গিয়ে কথা বলে স্যারের পেনশনের টাকা পাওয়া ব্যবস্থা করি। আমার সেই স্যার অনেক আগেই মারা গেছেন। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।। ২০০৫ সালের দিকে লালমোহন পৌরসভার কর্মচারীদের ৭/৮ মাস বেতন বন্ধ থাকার সংবাদ আমি দৈনিক আজকের বার্তায় প্রকাশ করেছিলাম। তার জন্য পৌর সভার তৎকালীন মেয়রের পক্ষ থেকে একজন আমাকে প্রান নাশের হুমকি দিয়েছিল। এবং তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সচিব ও পৌরসভার প্রকৌশলী জনাব জসিম উদ্দিন আরজু আমার দৈনিক মুক্তকন্ঠ পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিল তৎকালীন পৌর হিসাব রক্ষক আজিজুর রহমানকে আটকে রাখতে বলেছিল। এবং পৌরসভার সকল কর্মকর্তাকে বলে দেওয়া হয়েছে আমি পৌরসভায় আসলে আমাকে যেন কোন প্রকার সহযোগিতা না করা হয়। এবং আমার সাথে কেউ কোন প্রকার কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পরবর্তীতে আমি দৈনিক আজকের বার্তায় “লালমোহন পৌরবাসীর সুখ দুঃখ” শিরোনামে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। আমার সেই ধারাবাহিকে লালমোহনে শিশুপার্ক এর নামে কেনা জায়গা পরে তা ফায়ার সার্ভিসের কাছে বিক্রি করা, গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করানো, পূর্বের তারিখ দিয়ে চাপা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা, বেতন না পেয়ে পৌর টেক্সের টাকা কতিপয় পৌর কর্মচারীদের আত্মসাৎ করার সংবাদ প্রকাশ করি।
লালমোহনের গজারিয়া বাজারে এক ভুয়া চিকিৎসক আর কে মজুমদার নামে পরিচিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি, সাংবাদিক আনোয়ার চৌধুরী, ও সাংবাদিক মহিবুর রহমান আদনান কতিপয় সন্ত্রাসীর আক্রমনের স্বীকার হয়েছিলাম। পরবর্তীতে কতিপয় লোক আমাকে চিনতে পেয়ে উদ্ধার করে। আমি মনে করি এটাই আমাদের সার্থকতা। গজারিয়া এক নারী ধর্ষিতা হবার পর স্থানীয় চেয়ারম্যান সালিশির মাধ্যমে আর্থিক জরিমানা করে আসামীকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমি ঢাকার জাতীয় দৈনিক মুক্তকন্ঠে এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করি। সংবাদ প্রকাশের ১৫ দিন পর সহকারী পুলিশ সুপার (লালমোহন সার্কেল) আমাকে ডেকে পাঠায়। এবং আমাকে নিয়ে গজারিয়া স্বরজমিনে গিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এবং কেন থানায় মামলা করা হয় নাই তার জবাব চায়।
দৈনিক আজকের বার্তার সাবেক বার্তা সম্পাদক বাবর আলী ভাইয়ের এবং আজকের বার্তার ভোলা অফিসের চৌকশ সাংবাদিক লিটন বাসারের সহযোগিতায় লালমোহন থেকে দৈনিক আজকের বার্তায় আমি, আনোয়ার চৌধুরী এবং মহিবুর রহমান আদনান একসাথে কাজ করেছিলাম। বাবর আলী ভাই এবং লিটন বাসার আর আজ আমাদের মাঝে নেই, আমি তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। আমরা ৩ জন একদিন লালমোহন ভূমি জরিপ অফিসে গিয়ে রেকর্ড কিপারকে কথার ফাঁদে ফেলে তার কাছ থেকে কিভাবে টাকার বিনিময়ে একজনের জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে তার তথ্য জেনে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করি। পরবর্তিতে তাকে বদলী করে দেয়া হয়। আমারা তিন সাংবাদিক কর্মের প্রয়োজনে আজ ঢাকায়। চাকুরীর পাশাপাশি একটি জাতীয় পত্রিকার সাথে ৩ জনেই সম্পৃক্ত আছি।
আমার সাংবাদিকতা জীবনে যতটুকু সম্ভব হয়েছে, মানুষের সেবা করার চেষ্ঠা করেছি। যদিও তখন স্থানীয় স্বল্প শিক্ষিত দু’জন সংবাদ কর্মী অসহযোগিতা করতো। আমি কোন অপরাধীর বা দূর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে ঐ দুই সাংবাদিক অপরাধীর বা দূর্নীতিবাজের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলে আমার সংবাদের প্রতিবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা করে দিতেন। আমি সাংবাদিকতা করতাম নেশা হিসাবে আর সেই দুই সাংবাদিক সাংবাদিকতা করতো পেশা ও ব্যবসা হিসাবে। বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে সংবাদ লেখার নাম করে তারা টাকা নিতো। তাদের মদদদাতা ছিল বিএনপির সাবেক মেয়র, মেয়রের ভাই এবং বিএনপির নেতারা। সেই দুই সাংবাদিকের একজন অনেক আগেই মারা গেছেন। আর অন্যজন এখন লালমোহনে দাপটের সাথে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকতা হিসাবে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। সাংবাদিকতা করে বাড়ী করেছেন এবং সংসার চালাচ্ছেন এবং তিনি নিজেকে লালমোহনের অতীত ও বর্তমানের সেরা সাংবাদিক হিসাবে দাবী করছেন। (চলবে)