মফস্বল সাংবাদিকের সাতকাহন

মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন

১৯৮৯ সালর মাধ্যমিক স্বুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা চলছে। আমি ও পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। আমার আত্মীয় স্বজন সবাই পরীক্ষা হলের সামনের রাস্তায় অপেক্ষা করে আছে। পরীক্ষা শুরু হলো। সবাই উত্তর লেখা নিয়ে ব্যস্ত। হঠাৎ করে এক শিক্ষক এস জানালেন, যে ম্যাজিষ্ট্রেট আসছেন, সবাই সতর্ক হও। কাহারো কাছে কোন প্রকার নকল থাকলে ফেলে দাও বা সাবধানে রেখো। সাবাই সতর্ক হয়ে বসল। সরকারী জিপ গাড়ী হতে ম্যাজিষ্ট্রেট নামলেন। সাথে একজন ভদ্রলোককে নিয়ে আমাদের রুমে ডুকলেন। আমার কাছে ভদ্রলোকটিকে পরিচিত মনে হল। ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে ভদ্রলোকটি বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ঘুরে চলে গেল।

পরীক্ষা শেষে বিকালে বাজার আসার পর ম্যাজিষ্ট্রেটের সাথে থাকা ভদ্রলোকটিকে দেখলাম। তার সাথে সাক্ষাত করে জানলাম সে একজন সাংবাদিক। আমি তার কাছে সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তিনি বললেন, আগে পরীক্ষাটা ভালভাবে শেষ করো তার পর দেখা যাবে।

১৯৯০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অধুনাবিলুপ্ত তৎকালীন ভোলা জেলার শ্রেষ্ট পত্রিকা “সাপ্তাহিক ভোলাবানী” তে একটা সংবাদ পাঠা্ই। সাপ্তাহিক ভোলাবানীতে আমার পাঠানো সংবাদটি আমার নামে প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি ডটপ্রিন্ট প্রেসে ছাপা হত। তখন ভোলার একমাত্র জনপ্রিয় পত্রিকা ”সাপ্তাহিক ভোলাবানী” ছিল ভোলা জেলার ইত্তেফাক। তখন সাপ্তাহিক ভোলাবানী একটা সংবাদ প্রকাশ হলে আলোচিত হত। সকল কপি বিক্রি হয়ে যেত। আমি নিজেকে তখন সাংবাদিক ভাবতে শুরু করি। পরদিন আমি ভোলায় গিয়ে সাপ্তাহিক ভোলাবানী পত্রিকা অফিসে যাই। সেখানে ষ্ট্যাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান ছুট্টি ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তিনি আমার পরিচয় জেনে আমাকে নিয়মিত নিউজপ্রিন্টে লিখে সংবাদ পাঠাতে বলেন। সাপ্তাহিক ভোলাবানী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মরহুম আবু সুফিহান বাহার। পত্রিকা অফিসে তিনি আসার পর তার সাথে আলাপ করলাম। তিনি আমার সাথে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কথা বললেন। আমাকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। এবং আমাকে পড়াশুনা করার উপর জোর দিয়ে বললে, আমার পত্রিকা সাপ্তাহিক। আগে পড়াশুনা, তারপর সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পড়াশুনার ক্ষতি হউক তা আমি চাইনা। তার এ কথা আমি পালন করার প্রতিশ্রুতি দিলাম।

তাহার সাপ্তাহিক ভোলাবানী পত্রিকা অফিস ছিল সাংবাদিকদের আড্ডাস্থল। সেখানে পরিচয় হয় তৎকালিন দৈনিক ইত্তেফাকের ভোলা জেলা প্রতিনিধি শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান স্যারের সাথে। তখন ইত্তেফাক পত্রিকায় কাজ করতে হলে স্নাতক বা স্নাতোকোত্তর পাশ হতে হতো। আর ও পরিচয় হয় দৈনিক সংবাদের ভোলা জেলা প্রতিনিধি জনাব মোবাস্বের উল্লাহ চৌধুরীর সাথে এবং দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক দৌলৎখান (ভোলা) প্রতিনিধি মরহুম অধ্যক্ষ আফসার উদ্দিন বাবুল ভাইয়ের সাথে।

আবু সুফিহান বাহার, অধ্যক্ষ ফারুকুর রহমান, মোবাস্বের উল্লাহ চৌধুরী ও অধ্যক্ষ আফসার উদ্দিন বাবুল ভাইয়ের সাথে আলাপ করে, তাদের ব্যবহারে এবং অনেকক্ষন সময় কাটানোর পর সাংবাদিকতা করার প্রতি আমার আগ্রহ আর ও বেড়ে গেলো। হাবিবুর রহমান ছুট্টি ভাই আমাকে সাংবাদিকতা বিষয়ে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকা থাকেন, আমি আজও তার সেই উপদেশ মত চলার চেষ্টা করছি। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নিয়মিত দৈনিক ইত্তেফাকে, দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত লেখা পড়তাম এবং জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করতাম। ——-(চলবে।    

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here