ভোলার বোরহানউদ্দিনের আলোচিত জিনের বাদশার গডফাদার আজাদ হাওলাদার ব্যবসা কেন্দ্রের ছাদ থেকে পড়ে নিহত হলেন। দেশব্যাপী জিনের বাদশা সেজে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
আজাদ হাওলাদার (৩৭) সোমবার ভোলার কুঞ্জেরহাটে নিজ ব্যবসা কেন্দ্রের ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর আজাদের দীর্ঘ দিনের নানা অপকর্মের কাহিনী ছিল ওই এলাকার প্রধান আলোচনার বিষয়। ছাদের কার্নিশ থেকে তার পড়ে যাওয়াও ছিল রহস্যজনক। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুঞ্জেরহাট বাজারে পিতার নামে গড়ে তোলা তিন তলাবিশিষ্ট বজলু হাওলাদার সুপার মার্কেটের মালিকও ছিলেন আজাদ। ওই ভবনের নিচতলায় দোকানপাট, দ্বিতীয়তলায় ব্যাংক, তৃতীয়তলায় নিজ আবাস। ওই ভবনের ছাদের কার্নিশে পা রাখতে গিয়ে সকাল ৯টায় তিনি পড়ে যান বলে জানান বোরহানউদ্দিন থানার ওসি মাজহারুল আমিন। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ২০ বছর ধরেই আজাদ জিনের বাদশা সেজে প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। তার ওই বাহিনীর সদস্য রয়েছে কমপক্ষে তিন হাজার। একই সঙ্গে ওই চক্রের রয়েছে ইয়াবা ব্যবসা। পুলিশ ও ডিবি পুলিশের হাতে ১৫ বার আটক হন আজাদ হাওলাদার। ৪ মাস আগেও তিনি ইয়াবা চালানসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। বোরহানউদ্দিন থানার ওসি জানান, দুই মাস আগে তার বাড়ির ছাদ থেকে একটি লাশ পাওয়া যায়। ওই সময় আজাদ ও তার স্ত্রীকে পুলিশ আটক করেছিল। এছাড়া মাদকসহ জিনের প্রতারণার বেশ কয়েকটি মামলায় তিনি গ্রেফতার ও জেল খাটেন। বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া চরঢোস গ্রামের মৃত বজলু হাওলাদারের ছেলে আজাদ হাওলাদার এক সময় বিএনপির ক্যাডার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ওই আমল থেকেই বড় ভাইয়ের হাত ধরে জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা ব্যবসায় নামেন আজাদ। গড়ে তোলেন দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক। এমনকি জিনের কণ্ঠ অনুকরণ, মানুষকে প্রলুব্ধ করার কৌশল রপ্ত করার প্রশিক্ষণ সেন্টার রয়েছে। ওই সেন্টারের প্রধানও ছিলেন আজাদ। মাঝের কয়েক বছর ঝিমিয়ে পড়লেও গত কয়েক বছর ধরে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে ওই চক্র। এদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দেশের বহু মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে। ঢাকার গুলশানের এক নারীর কাছ থেকে ওই চক্র নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার যার মূল্য ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে ওই চক্র মোবাইল ফোনে ইমোতে সাধারণ মানুষকে জিনের কণ্ঠ ধারণ করে রোগ থেকে নিরাময়, মামলার রায় করানো, সম্পদ অর্জন- এমন নানা ধরনের প্রলুব্ধ করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে মামলাও রয়েছে বেশ কয়েকটি। সোমবার সকাল ৯টায় ছাদ থেকে পড়ে গেলে আহত আজাদকে দ্রুত ভোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি। তিনি দুটি বিয়ে করেছিলেন। দুই পরিবারে তার দুই স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।