Wednesday, June 25, 2025
Homeদেশগ্রামদুর্ঘটনা প্রতিরোধে সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

ছোট বেলা থেকেই অরক্ষিত রেল ক্রসিং এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানীসহ প্রতিটি ঘটনাই হামিদুর রহমানের মনে নাড়া দিতো। তাই ইচ্ছে ছিলো এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার। সেই চিন্তা চেতনা থেকে সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল উদ্ভাবন করেছেন।

২০২২ সালে মার্চ মাসে রেলমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে গত ২০ জানুয়ারি থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া লেভেল ক্রসিংয়ে এই উদ্বাবনটি বাস্তবায়ন ও ব্যবহার করা হচ্ছে। হামিদুরের দাবি, সারাদেশে এই সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল বাস্তবায়ন করা হলে অরক্ষিত রেলক্রসিং এ দুর্ঘটনা কমে যাবে।  মো. হামিদুর রহমান কালিহাতী উপজেলার হাসড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। তিনি ২০০৬ সালে এসএসসি, ২০০৮ সালে এইচএসসি, ২০১৫ সালে সরকারি সা’দত কলেজের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছে। এছাড়াও তিনি ২০১২ সাল থেকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অপর দিকে হামিদুর ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী টেকনিক্যাল কলেজ থেকে ছয় মাসের ইলেকট্রিক্যাল কোর্স ও ২০১৭ সালে এক বছরের কমিউনিক্যাশন টেকনিক্যাল কোর্স সম্পন্ন করেছেন। বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে যোগাযোগের অন্যতম নিরাপদ, আরামদায়ক ও পরিবেশ বান্ধব মাধ্যম হল রেলপথ। দেশের প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথে দুই হাজার ৮৫৬ টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৮৯ শতাংশ অরক্ষিত। দেশের সকল অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়ত রেল পরিবহনের সাথে সাধারন পরিবহনের দুর্ঘটনায় রেল পরিবহন ও সাধারন পরিবহনের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের জীবনহানী হচ্ছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আমার স্বচিন্তিত নিজস্ব ও একক উদ্ভাবনটির নাম সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল। যা বিশ্বে নতুন ও অভিনব। ২০১৮ সাল থেকে এই উদ্ভাবনটি নিয়ে কাজ করছি। এই বিষয়ে আমার একটি গবেষণা পত্র আছে। এই উদ্ভাবনের উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত সনদপত্রের পাশাপাশি কপিরাইট সনদপত্র আছে এবং পেটেন্ট সনদপত্রের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। এই উদ্ভাবনটি সোলার পাওয়ারের সাহায্যে সেন্সর অথবা ট্যাগ আইসোলেশনের মাধ্যমে জিএসএম নেটওয়ার্ক দ্বারা অথবা ছাড়া রেলপথের লেভেল ক্রসিংয়ে অটোমেটিক সিগন্যাল বা সংকেত প্রদান করে। ইহা মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে পেরক যন্ত্র, গ্রাহক যন্ত্র ও সম্প্রচার যন্ত্র। তিনি আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে ট্রেন লেভেল ক্রসিং থেকে এক থেকে দুই কিলোমিটার দুরে থাকাবস্থায় প্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে গ্রাহক যন্ত্রে সংকেত পাঠায়। এরপর গ্রাহক যন্ত্র তা গ্রহণ করে এবং প্রসেসিং করে সম্প্রচার যন্ত্রে প্রেরন করে। অতপর সসম্প্রচার যন্ত্রের অডিও অংশে বলে থাকে ট্রেন আসছে থামুন এবং ভিডিও অংশে লেখা থাকে ট্রেন আসছে থামুন। একই সাথে এই যন্ত্রে গেট ব্যারিয়ার ব্যবহার করা যায়। এই বার্তা শুনে এবং দেখে লেভেল ক্রসিংয়ে পারাপারকারী যাত্রী ও সাধারন পরিবহন সতর্ক হয়। এই যন্ত্রের মাধ্যমে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সাথে সাধারন পরিবহনের দুর্ঘটনা ঘটে না। একই সাথে এই যন্ত্রের সাহায্যে ট্রেনের অবস্থান সনাক্তকরনের মাধ্যমে ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ রোধ করা যায়। এর ফলে জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। আমার এই উদ্ভাবনটি রেলপথ মন্ত্রীর সাথে গত বছরের ২৩ মার্চ অনুমোদন সাপেক্ষে কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া লেভেল ক্রসিংয়ে গত ২০ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন ও ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার এই উদ্ভাবনটি রেলপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেশের সকল লেভেল ক্রসিংয়ে কাজে লাগানোর জন্য সরকার ও রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতা কামনা করছি। সাত থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল বসানো সম্ভব। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য