শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা,টাঙ্গাইলঃ
সাংগঠনিক কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাতের আধাঁরে অগতান্ত্রিক ও নিয়মবহির্ভুতভাবে টাঙ্গাইল জেলা মাইক্রোবাস-কার মালিক কল্যান সমিতির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান কমিটিকে না জানিয়ে মাইক্রোবাস ও কার মালিক কল্যান সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষনা করার কারনে মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টিকে সংগঠনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন অনেকে। দীর্ঘদিন ধরে গাড়ির ব্যবসায়ীরা শান্তিপুর্ন পরিবেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও এখন তাদের মাঝে ক্ষোভ আর হতাশা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের দিকে টাঙ্গাইল জেলা মাইক্রোবাস-কার মালিক কল্যান সমিতি গঠন করা হয়। সমিতির বর্তমান কার্যালয় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থিত। সমিতির একটি পুর্নাঙ্গ কমিটিও রয়েছে। প্রতিজন মালিকের দেয়া মাসিক মাত্র একশ’ টাকা দিয়ে এ সমিতি পরিচালিত হয়ে আসছে। এই টাকা দিয়ে সমিতির একটি ঘর নির্মানসহ যাবতীয় আসবাবপত্র ক্রয় এবং নানা খরচ বহন করা হয়। সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক হচ্ছেন- যথাক্রমে প্রশান্ত পাল ও রেজাউল করিম রিপন।
এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে সমিতির কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় হাফিজুর রহমান মাসুদকে সভাপতি ও সোহেল রানাকে সাধারন সম্পাদক করে নাম ঘোষনা করা হয়। টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর এ দুজনের নাম ঘোষনা করেন। এ সময় বর্তমান মালিক সমিতির কেউ উপস্থিত ছিলেননা বলে জানিয়েছেন বর্তমান সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক।
এছাড়াও সমিতির সাংগঠনিক নিয়ম অনুসারে টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস মালিক সমিতি এবং টাঙ্গাইল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কোন প্রতিনিধি বা ইউনিয়নের মাইক্রোবাস শ্রমিক কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেননা। কাউকে না জানিয়ে রাঁতের আধাঁরে সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষনা করাকে কেন্দ্র করে সংশি¬ষ্টদের মাঝে মারাত্মক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সংশি¬ষ্ট সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ কর্মসুচি দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
এ বিষয়ে কিছুই জানতেনা বলে জানিয়েছেন জেলা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রশান্ত পাল। এছাড়াও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সংগঠণের সাধারণ সভার বিষয়েও ওয়াকিবহাল ছিলেন না তিনি। এখনও তিনি গাড়ীর মালিক আছেন বলে জানান তিনি।
কমিটির কার্যকরী সভাপতি কাজী একরামুল হক টিটু বলেন, ঘোষিত সভাপতি আমাকে সাধারণ সভার কথা জানালেও কমিটি গঠণের বিষয়টি জানতাম না । এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলাম না । পৌর মেয়র আর কয়েকজন কাউন্সিলর মিলে সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষনা করেন।
জেলা মাইক্রোবাস শ্রমিক সমিতির সভাপতি সানোয়ার হোসেন খান ছানা বলেন, টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস শ্রমিক সমিতির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় জেলা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতি। তবে সংগঠণের বিধি বিধান না মেনে ও আমাদের না জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পৌর মেয়র সমিতির নতুন সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষনা করেন। জেলা বাস কোচ মিনিবাস শ্রমিক সমিতির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলেও সংগঠণের সভাপতি সম্পাদককেও জানানো হয়নি নতুন কমিটি গঠণের কথা। আমরাও ছিলাম না ওই কমিটি গঠণের কার্যক্রমে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ৭৫জন শ্রমিক জেলা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ মালিক ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সদস্য। ওই ৭৫ জন শ্রমিক নিজের গাড়ী নিজেরাই চালায়। নতুন কমিটি গঠণ নিয়ে অসন্তোষ ওই শ্রমিক-মালিকরা।
সদ্য ঘোষিত সভাপতি ও সাবেক সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান মাসউদ বলেন, তার একক নেতৃত্বে এতদিন পরিচালিত হয়েছে সংগঠণটি। দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থাকলেও হয়নি সমিতির কখনও সাধারণ সভা। আমি এবারই প্রথম সাধারণ সভার আয়োজন করি।
টাঙ্গাইল জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্ত রঞ্জন সরকার বলেন, আগের কমিটির সহ-সভাপতি মৌখিক ভাবে আমাদের সাধারণ সভার দাওয়াত দিয়েছিল। তবে ওই দাওয়াতে সংগঠণের সকল সদস্য উপস্থিত না থাকার কারণে আমি এবং আমার সংগঠণের সভাপতি সেখানে উপস্থিত হয়নি। পরে জানতে পারি পৌর মেয়র সাহেব নতুন কমিটিটি গঠণ করেছেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম. সিরাজুল হক আলমগীর জানান, নতুন কমিটি গঠণ নিয়ে আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। নতুন কমিটিটিও গঠণ করা হয়েছে আগের কমিটির সহ-সভাপতিতে সভাপতি করে। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার মত কিছু হয়নি। কেননা সাধারণ সভা আর নতুন কমিটি গঠণের বিষয়টি জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্ত রঞ্জন সরকার আর তৎকালীন কার্যকরী সভাপতি টিটুর সাথেই আলোচনা করে করা হয়েছে। তারা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন।