Monday, June 23, 2025
Homeদেশগ্রামচরম হতাশা ও নিরব কান্না লালমোহনের জেলে পল্লীগুলোতে!

চরম হতাশা ও নিরব কান্না লালমোহনের জেলে পল্লীগুলোতে!

জাহিদ দুলাল, লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি :

একদিকে বেড়েছে জ্বালানী তেলের দাম। অন্যদিকে নদীতে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। এনিয়ে দার-দেনায় জড়িয়ে পড়ছে ভোলার লালমোহন উপজেলার জেলেরা। যার ফলে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে উপজেলার জেলে পল্লীগুলোতে। এ যেন জেলেদের নিরব কান্না! উপজেলা মৎস্য অফিসের হিসেবে লালমোহনে মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা রয়েছে ২৩১৭৮ জন। তবে এর প্রকৃত সংখ্যা আরও অধিক।

উপজেলার ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের বাত্তিরখাল এলাকার জেলে শহিজল হক বলেন, নদীতে তেমন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। সাগরে কিছু ইলিশ থাকলেও তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সাগরে গিয়ে যে ইলিশ পাওয়া যায় তাতে প্রতিবার ফিরে দেখা যায় লাভের চাইতে লোসকানের পরিমানই বেশি। কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্দশায় রয়েছি। ৪ টি এনজিওতে ঋণ রয়েছে। মাস শেষে ঠিকমত এনজিওর কিস্তি দিতে পারছি না।

বাত্তিরখাল এলাকার একটি মাছ ধরা ট্রলারের মাঝি মো. শাহেআলম বলেন, নদী বা সাগরে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে ৭ দিনের জন্য একটি ট্রলারে অন্তত ১৫-১৬ জন জেলে বের হন। এই সাতদিনের জন্য ট্রলারে খরচের পরিমান প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। তবে মাছ শিকার শেষে তীরে ফিরে দেখা যায় ৫০ হাজার টাকার মাছও পাওয়া যায়নি। এজন্য অনেক জেলে এখন নদীতে যেতে চাচ্ছে না।

উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করা জেলে মো. ওয়াসিম জানান, বর্তমানে তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। তার ওপরে যে হারে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে নদী থেকে ফিরে দেখা যায় লাভের চাইতে লোসকান বেশি। এ অবস্থায় জেলে পেশায় এখন টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে ঋণের দায়ে গ্রাম ছেড়ে পালাতে হবে। তাই আমাদের দাবী জেলেদের জন্য সরকারি যে বরাদ্দ রয়েছে, তা যেন আরও বৃদ্ধি করা হয়। এবং সুদবিহীন সরকারিভাবে যেন ঋণের ব্যবস্থা করা হয়।

উপজেলার নাজিরপুর মাছ ঘাটের আড়ৎদার মো. মনির হাওলাদার জানান, নদীতে মাছ কম থাকার কারণে জেলেরা আমাদের থেকে যে টাকা নিয়েছে তাও ঠিকমত শোধ করতে পারছে না। এতে করে যেমন জেলেদের সমস্যা হচ্ছে, তেমনি আমাদেরও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলতে সমস্যা হচ্ছে। রীতিমত সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।

নদীতে মাছ কম পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. তানভির আহমেদ বলেন, নদীর মোহনা অঞ্চলে পলি জমার কারণে নদীতে গভীরতা কমে গেছে। যার জন্য নদীতে স্রোতও কমেছে। যার ফলে বর্তমানে যে পরিমান মাছ নদীতে আসার কথা তা আসতে পারছে না। যার জন্যই নদীতে মাছ স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। নদীর এসব স্থান যদি ড্রেজিং করা হয় তাহলেই নদীতে আগের মত মাছ পাওয়া যাবে।

মেরিন ফিশারিজের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, তবুও আশা করছি সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক থেকে নদীতে ইলিশের সংখ্যা আরও বাড়বে। তখন হয়তো জেলেরা তাদের কাঙ্খিত ইলিশ পাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য