মুরাদ আহম্মেদ
দেড় মাস আগে বিএম কলেজের বিপরিতে তালভিটে গল্লিতে একটি ছাগলসহ দু যুবককে ধরে ফেলে পুলিশ। পরদিন দু যুবককে কারাগারে পাঠানো হয়। ছাগল রয়ে গেছে মডেল কোতয়ালী থানায়। ছাগলের মালিক কে তা এখনো জানা যায়নি। কেউ এসে ছাগল দাবিও করেনি, কেউ এসে বলেনি আমার ছাগল চুরি হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের পুলিশি ততপরতা কি দারুন, তারা ছাগল চোরও ধরেছে, আর ছাগলও উদ্ধার করেছে। অথচ গত ২৯ মে প্রকাশ্য দিবালোকে সময় টেলিভিশনের বরিশাল এর সিনিয়র রিপোর্টার স্নেহধন্য অপূর্ব অপুর উপর হামলা হলো, তাকে অপহরনের চেস্টা হলো, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে তাতক্ষনিক জড়িতদের চিহ্নিত করা হলো, নাম বলে দেয়া হলো, আজ পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই ধরতে পারলো না। মামলায় দেয়া হলো নাম, পুলিশ মামলা নিলো অজ্ঞাতনামা, বলা হলো অপহরনের চেস্টা, পুলিশ লিখে নিলো জোর করে গাড়িতে তোলার চেস্টা। আজ পর্যন্ত কিছুই হলো না।
আমি থানায় গিয়ে ছাগলটার দিকে অনেকক্ষন আকিয়ে দেখলাম। খুব ঈর্ষা হলো ওর ভাগ্যকে দেখে। ছাগলটিকে ভালো করে দেখে তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে বড় অসহায় মনে হলো। একটা প্রশ্ন বার বার শুধু মনে জেগেছে যা আমরা সাংবাদিক হয়ে এমন কি অন্যায় করেছি? লিখিতো সমাজের কথা, বলিতো মানুষের কথা। কিন্তু বিনিময়ে কি পাচ্ছি। আজ অপুর উপর হামলা হয়েছে, কাল হবে আমার উপর। ক্ষোভ হবে বিক্ষোভ হবে। কিন্তু কাজ কি হবে।
আজ খুব মনে পড়ে জয়ন্ত স্যার আর সূর্য্যবাবু স্যারের কথা। একজন আমাকে বলতেন “গরু, ক্লাস দিয়া বাইর হ”, অন্যজন বলতে,” আস্তা ছাগল একটা”।
আজ আমার শিক্ষাগুরুদের প্রতি প্রণাম জানিয়ে বলবো, ” স্যার, আপনারা ঠিকই বলতেন, আপনারা বিচক্ষন ছিলেন, আপনাদের কথাও ঠিক ছিলো। গরু ছাগলের মতো পিটিয়ে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। আজ সেই শিক্ষা নিয়েই পথ চলছি। স্যারগো, গরু আর ছাগল হলেই বোধহয় ভালো হতো। ভাগ্যিস আজ আপনারা বেচে নেই, থাকলে বুক ফেটে যেতো। এতো পিটিয়ে যাদের মানুষ করেছেন তাদের হাল দেখুন আর ছাগলের ভাগ্য দেখুন”।
শেষকালে শুধু এটুকুই বলবো মানুষ হয়ে যারা অপুর পাশে দাড়িয়েছেন, আমাদের পাশে দাড়িয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আর যারা ছাগল সেবা করছেন আদেরকে বলবো, মনুষই সৃস্টির সেরা জীব। আমাদের দিকেও একটু তাকান!
অবিলম্বে অপরাধিদের গ্রেপ্তার না করলে হয়তো এমন সময় আসবে যেদিন সদর রোডের মাঝখানটায় খাচা বানিয়ে নিজেরাই নিজেদের হাত পা বেধে খাচায় ভেতরে স্বচ্ছা বন্ধ হবো, এটুকু প্রতিবাদ করার অধিকার এই দেশ আমাদের দিয়েছে।
মুরাদ আহম্মেদ, ইনডিপেনডেন্ট টিভির বরিশাল প্রতিনিধির ফেইজ বুক পেইজ থেকে।