ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে একদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
পল্টন থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রিমান্ড শেষে তিথিকে শনিবার আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি।
শুনানি শেষে ঢাকার মহারনগর হাকিম শহিদুল ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ১২ নভেম্বর তিথিকে একদিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। ওই দিন তার স্বামী শিপলু মল্লিকের রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর গত ১১ নভেম্বর বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নরসিংদীর মাধবদীর পাঁচদোনায় স্বামীর এক দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তিথি সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন দুপুরে তার স্বামী শিপলু মল্লিককে রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
১২ নভেম্বর সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে সংস্থাটির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজি জামিল আহমদ বলেন, গ্রেফতার এড়াতেই তিথি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যান এবং বিষয়টি অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন।
ডিআইজি জামিল আহমদ আরও বলেন, গত ২৫ অক্টোবর মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বেরিয়ে তিথি প্রেমিক শিপলু মল্লিকের সঙ্গে বাগেরহাটে গিয়ে বিয়ে করেন। এরপর তারা ৯ নভেম্বর ঢাকায় ফিরে আসেন। পরে নরসিংদীর এক বাড়িতে আত্মগোপন করেন। তিথি সরকার আত্মগোপনে থেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল এভাবে আত্মগোপনে থেকে নিজেকে লুকিয়ে অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে রেহাই পাবেন বা ঘটনা অন্যদিকে ধাবিত হবে।
গত অক্টোবরের শেষদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে বলা হয়- সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ের চারতলা থেকে তিথি সরকারকে ‘হাত পা-বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে’। সেই পোস্টটি মিথ্যা ও সিআইডিতে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান ডিআইজি জামিল আহমদ।
তিনি বলেন, এটি একটি গুজব। ইতোমধ্যে নিরঞ্জন বড়াল নামে গুজব রটনাকারীকে রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরঞ্জনসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত ২ নভেম্বর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
গত ১৬ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিথির ফেসবুক পেজ থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেয়া হয়।
৫ নভেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে তিথি সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আবু মুসা রিফাত নামের এক ব্যক্তি। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিথি।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিথি সরকার গত ১৬ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কটূক্তি করেছেন।
অভিযোগে আরও জানানো হয়, ইতোমধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কারণে তিথিকে তার সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই অভিযোগে গত ২৬ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত আদেশে তিথি সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা হয়।