Tuesday, November 5, 2024
Homeঅপরাধরাবি ভিসি-প্রোভিসি এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দুর্নীতির কারনে অপসারণ হতে পারে

রাবি ভিসি-প্রোভিসি এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দুর্নীতির কারনে অপসারণ হতে পারে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি দুর্নীতির কারনে অপসারণ হতে পারেন। রাবির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আবদুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে মোট ২৫ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। সরেজমিন দু’দফায় তদন্ত করে ২০ ও ২১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ইউজিসির তদন্ত দল। তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বিভিন্ন প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের জন্য তিন ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়েছে। তারা হলেন- উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুল বারী। এ তিনজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল সবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছে ইউজিসি। উপাচার্যের ক্ষেত্রে উপাচার্যের নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের সম্পদ, আয়ের উৎস, ব্যাংক হিসাব এবং আয়-ব্যয়ের বিবরণী সরকারের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ তদন্ত দলের প্রধান ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম মিডয়াকে এসব তথ্য জানান। অধ্যাপক আফরোজা বলেন, তদন্ত কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদকে জমা দিয়েছি। তদন্তে আমরা রাবি প্রশাসনের বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্নিষ্ট দপ্তর এসব বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবে। আর ইউজিসির তদন্তে চরম অসহযোগিতা করায় অবিলম্বে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে অধ্যাপক বারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দুই কার্যদিবস ধরে প্রতিবেদনটি বিশ্নেষণ করা হয়েছে। উপাচার্যকে এ পদে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় সুচারুভাবে পরিচালনা করা আর সম্ভব নয় বলে সরকারের সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন। উপাচার্যকে অপসারণের বিষয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেত চাওয়া হয়েছে। তা পেলে এ সপ্তাহের মধ্যেই এ-সংক্রান্ত নথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে আচার্যের কাছে পাঠানো হবে। ইউজিসির নীতিনির্ধারক মহল থেকেও জানা গেছে, রাবি উপাচার্যকে অপসারণ করা হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বয়স ৬৫ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি ২০১৭ সালের ২১ জুন চাকরি থেকে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার আগের মাসে ৭ মে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। ২০২১ সালের ৬ মে পর্যন্ত তার এ পদের মেয়াদ রয়েছে। জানা যায়, গত ৪ জানুয়ারি রাবি প্রশাসনের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সংবলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুদক ও ইউজিসিতে দাখিল করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থক শিক্ষকদের একাংশ। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগগুলো তদন্তে ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরকে সদস্য করা হয়। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করে। তদন্ত শেষ করে সরকারের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন সুপারিশসহ মোট ৭৩৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এতে ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী প্রতিবেদন রয়েছে। তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে উপাচার্য স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে (আচার্য) অসত্য তথ্য দেওয়া, শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপাচার্য শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা শিথিল করে নিজের মেয়ে এবং জামাতাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে ৩৪ জন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি ১৮ মাস ধরে নানা অজুহাতে দখলে রাখেন। এ বাড়ির ভাড়া বাবদ তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
মেয়ে সানজানা সোবহানকে নিয়োগ দিতে উপাচার্য এক সময় নিজেই ছুটে যান কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও মৌখিক পরীক্ষার দিন মেয়ের সঙ্গে যান। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মাধ্যমে সেখানকার উপাচার্যকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। মেধা তালিকায় না থাকায় সানজানার চাকরি দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ইসলামী ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ- এমন প্রচার রয়েছে রাবি ক্যাম্পাসে। তাতেও হাল ছাড়েননি উপাচার্য। অভিযোগ আছে, মেয়েকে নিয়োগ দিতে অধ্যাপক সোবহান নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই খোলেন নতুন বিভাগ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা পরিবর্তন করে মেয়েকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন।
আরও অভিযোগ আছে, পরিবর্তিত নীতিমালার সুযোগে মেয়ের জামাই এটিএম সাহেদ পারভেজকেও নিয়োগ দেন অধ্যাপক সোবহান। ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬২তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যে কোনো বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় মেধা তালিকায় প্রথম থেকে সপ্তম অবস্থানে থাকতে হবে। কিন্তু মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা সানজানা সোবহান সেই শর্ত পূরণ তো দূরের কথা, নূ্যনতম মেধা তালিকায়ও অবস্থান করতে পারেননি। তাকে নিয়োগ দিতে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৪৭৫তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা থেকে একাডেমিক পজিশন (মেধা তালিকা) বাদ দেন উপাচার্য। আর তাতেই কপাল খুলে যায় সানজানার। ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট’ নামে নতুন বিভাগ খুলে সেখানে তার নিয়োগ সম্পন্ন করা হয় একই বছরের ৪ অক্টোবর।

ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, অধ্যাপক সোবহান তার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে ‘উপাচার্যের বাসভবনে’ ওঠার পর থেকে অধ্যাপক হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া ডুপ্লেক্স বাড়িটি কাগজে-কলমে ২০১৭ সালের ২৬ জুন ছেড়ে দেন। প্রকৃতপক্ষে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মেরামতের নাম করে তার ব্যক্তিগত আসবাব ওই বাড়িতে রাখেন। যে কারণে অন্য কোনো অধ্যাপককে ওই বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রার্থীর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি নৈতিকতাবিবর্জিত এ ধরনের কর্মকান্ড জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য