মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন
লালমোহনের মসজিদ সড়কের আরজু হোটেল পন্যের গুনগতমান বজায় রেখে দীর্ঘদিন যাবৎ সুনামের সাথে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছ্। আজ সবার কাছে একটি প্রিয় হোটেল। সকালের পরোটা আজও স্পেশাল, দুপুরের পান ও গোল কেক, মিষ্টি, দুপুরের খাবার, বিকালের পাউরুটি মোগলাই আজও বিখ্যাত। ফজরের নামাজের পর থেকে আরজু হোটেলে পরেটার কেনার জন্য লাইন দিতে হয়। সকাল ৮ টার পর পরোটা পাওয়া যায় না।
১৯৯০ সালে শেষের দিকে বাসায় মেহমান তাই সকাল ৭টার সময় আরজু হোটেল থেকে পরেটা আনতে বাসা থেকে বের হলাম। ভোলা-চরফ্যাশন সড়কের পাশে আমাদের বাসা। প্রধান সড়কে উঠতিই দেখা হলো লালমোহনের সর্বজন শ্রদ্বেয় প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব ইউনুছ মিয়া স্যারের সাথে। তিনি লালমোহন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। প্রতিদিন ফজরের নামাজ পরে প্রাত ভ্রমন করেন। আলহাজ্ব ইউনুছ মিয়া স্যার আমার নানা মরহুম এ কে এম আজিজুল ইসলাম এবং আমার মায়ের শিক্ষক ছিলেন।

আমার মা আমাকে যখন ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন, আমার আজও মনে আছে, আলহাজ্ব ইউনুছ মিয়া স্যারকে বলেছিলেন, স্যার আমার ছেলেকে আপনার হাত তুলে দিলাম, আমার আর কোন দায়িত্ব নেই। আশা করি ভালভাবে মাধ্যমিক পাশ করে বের হবে। তারপর আমাকে শিক্ষকদের রুমে নিয়ে গেলেন। আমার মা ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা ছিলেন। শিক্ষক রুমে তখন হান্নান স্যার, মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন স্যার, আমার মায়ের চাচা জনাব শাহাবুদ্দিন সেন্টু স্যার, তোফাজ্জল হোসেন স্যার , সোলেমান স্যার, খোরশেদ মিয়া স্যার, সামাদ হোসেন স্যার ও মোফাজ্জল হোসেন স্যার, সব স্যারেরা আমাকে বললেন তুমি আমাদের ম্যাডামের ছেলে, নিয়মিত স্কুলে আসবে, কোন প্রকার ফাঁকি দিলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। শাহাবুদ্দিন সেন্টু স্যার, তোফাজ্জল হোসেন স্যার ও খোরশেদ মিয়া স্যার আজ আর আমাদের মাঝে নেই। আল্লাহ স্যারদেরকে বেহেস্ত নসিব করুন। স্কুলে পড়ার সময় প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব ইউনুছ মিয়া স্যারে যে কড়া শাসন আমি দেখেছি তা কোনদিন ভুলতে পারব না। ক্লাশ শুরুর পর স্যার স্কুলের বারান্দায় ব্যাতের লাঠি নিয়ে পায়চারি করতেন এবং দেখতেন কোন ছাত্র বারান্দায় আছে কিনা বা সব ক্লাশে শিক্ষক আছে কিনা। কোন ক্লাশে শিক্ষক সময়ত না আসলে স্যার নিজে ক্লাশে ঢুকে ক্লাশ নিতেন। আমি হাত দিয়ে সালাম দিতেই স্যার আমার দিকে তাকিয়ে সালামের উত্তর নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তারপর আমাকে বললেন, শুনেছি তুমি নাকি পত্রিকায় লেখালেখি করো? স্যার হাঁটতে শুরু করলেন, আমিও স্যারের সাথে হাঁটতে শুরু করলাম। এখনও তোমার পড়াশুনা শেষ হয়নি। আগে পড়াশুনা শেষ করবা তারপর অন্য কিছু করবা। লালমোহনে সাংবাদিকতা করেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, যিনি এম এ পাশ, সাংবাদিকতা করেছেন এ এই্চ এম বজলুর রহমান যিনি এম এ পাশ। তুমি এখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছো। এখন সাংবাদিকতা করলে তোমার পড়াশুনার বিঘ্ন ঘটবে। তবে শখের বসে লেখালেখি করা ভাল। ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা করলে সততার সাথে করবে। অন্যায়ের সাথে আপোষ করবে না। প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব ইউনুছ মিয়া স্যার অনেক আগে ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ স্যারকে বেহেস্ত নসিব করুন। আমিন।