শাহীন কামাল :
ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলা সদরে অবস্থিত শতবর্ষকাল অতিক্রমকারী স্কুল থেকে এবছর এস এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১০ জন শিক্ষার্থী আর অকৃতকার্য হয়েছে ২৬ জন। ভোলা জেলার প্রায় মধ্যখানে অবস্থিত স্কুলটির অতীত ঐতিহ্য ঈর্ষণীয় ছিল। ভোলা জেলার অন্যান্য উপজেলা সদরে অবস্থিত স্কুলের বিগত দশকের ফলাফলের সাথে তুলনা করলে স্পষ্ট দেখা যায়, লালমোহন হাইস্কুলের ফলাফল অধিকতর ভালো ছিলো কোনকোন ক্ষেত্রে। এমনকি লালমোহন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ফলাফলও এর থেকে ভালো ছিলনা। থানার অন্য স্কুলগুলোর সাথে ফলাফলে ফারাক ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু আজকের ফলাফলে বেশ কয়েকটি স্কুলের ফলাফল এ স্কুল থেকে ভালো হয় কিভাবে সে আলোচনা এখন আসতেই পারে।
আলোচনার সুবিধার্থে আমি লালমোহনের পার্শ্ববর্তী উপজেলা সদরের কয়েকটি স্কুলের ফলাফল তুলে ধরছি। ভোলা সরকারি স্কুলে জিপিএ – ৫ পেয়েছে ১১৮, ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পেয়েছে ১১৭টি, বোরহানউদ্দিন সরকারি স্কুলে পেয়েছে ৩৩ টি, চরফ্যাশন টিবি স্কুলে জিপিএ ৫ এর সংখ্যা ১৪৬, পাশের হার ১০০। এসকল স্কুলের বিগত দশকের ফলাফল লালমোহন হাইস্কুলে ফলাফল থেকে খুব একটা আলাদা ছিলো না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই স্কুলটির ফলাফল এইভাবে ক্রমান্বয়ে নিচে নামার কারণ নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে কিনা তাও ভাববার বিষয়।
লালমোহন স্কুলটি সাম্প্রতিককালে জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় একেবারে শেষ ধাপে আছে। কয়েকদিন আগে পদ সৃজন হয়েছে। অচিরেই শিক্ষক কর্মচারী সরকারি বেতন স্কেলে বেতন পাবেন তাতে লালমোহনের মানুষের কী উপকার হবে, সেই প্রশ্ন জাগতেই পারে।
লালমোহন আমার জন্মস্থান। এখানকার আলো বাতাসে বড় হয়েছি। কোন ভালো সংবাদ বুক স্পর্শ করে। খারাপ সংবাদে বুক হুহু করে। লালমোহন হাইস্কুলের সাথে আছে প্রাণের স্পন্দন। অনেকেই শুধু স্কুলে পড়ে। আমি খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীর মতো স্কুলে শুধু পড়িনি- থেকেছিও। স্কুলসংলগ্ন ছাত্রাবাসে কেটেছে জীবনের কয়েকটি বছর। আমি এ স্কুলের ঐতিহ্য দেখেছি। পাবলিক পরীক্ষায় দেখেছি স্কুলের ভালো ছাত্রদের দেখতে অন্য স্কুলের শিক্ষক – ছাত্ররা আসতেন। তখনকার যশোর শিক্ষাবোর্ডে স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীকে নিয়ে রাস্তায় মিছিল হতে দেখেছি। চেহারায় না চিনলেও এ স্কুলের ভালো ছাত্রদের নামে জানতেন এ রকম কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছিল।
লালমোহনের সচেতনমহল এ বিষয়ে নিয়ে ভাবতে পারেন। যারা ঐ সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, অতীত গৌরবের অংশীদার ছিলেন, স্কুলের তথা সমাজের প্রতি দায় আছে, ভালোবাসা আছে- আজ এ আঁধারে চোখ বন্ধ করে থাকবেন না। ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। তিলে তিলে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৃত্যুতে চোখ বন্ধ করে চল্লিশার অপেক্ষা করবেন না। লালমোহন স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী যারা কর্মক্ষেত্রে আলোকিত তাদের খারাপ লাগছেনা? আমার তো বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কান্না আসছে। আমি তো এই লালমোহন হাইস্কুলকে চিনি না। আপনারা চিনেন?