Thursday, June 26, 2025
Homeবাংলাদেশনিজেকে শুধরাতে না পারলে, বৃদ্ধাশ্রমেই শেষ ঠিকানা

নিজেকে শুধরাতে না পারলে, বৃদ্ধাশ্রমেই শেষ ঠিকানা

মোঃ রফিকুল ইসলাম

মোঃ রফিকুল ইসলাম

প্রিয় বন্ধু মহল, আছছালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই নিজ নিজ পরিবার পরিজন্ নিয়ে সুখে এবং সুস্থ্য আছেন। আমরা ফেস বুকে এসে অনেক সুন্দর বাণী দেখি এবং বুঝার চেষ্টা করি। পক্ষান্তরে অনেকে খারাপ কিছু পোস্ট দিয়ে থাকেন এটাও অনিচ্ছাবশত দেখতে হচ্ছে। যারা এই জাতীয় পোস্ট দেন দয়া করে এর থেকে বিরত থাকুন। আড়াই দিনের জীবনে একদিন ডাক পড়বেই সেই ডাকে সাড়া দিতেই হবে। অতএব সকলে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর দেখানো পথে থাকতে হবে। তবেই আমরা ইহকাল ও পরকালে সুখ ও শান্তি আশা করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে যেনো আল-কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক চলার তৌফিক দান করেন। আমিন।

যাক আসল কথায় আসা যাক। আজ এক ভাই সুন্দর একটি পোস্ট দিয়েছেন তাঁর পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। তবে তিনি এক তরফা একপক্ষের কথা লিখেছেন। উক্ত ভাইয়ের দেয়া পোস্টের সাথে একমত হতে পারিনি। তাই তার লেখাটি মেনে নিতে পারছি না।

দেখুন আমরা মনুষ্য জাতি। আমাদের চোখ লজ্জা রয়েছে। এবং মহান আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর দেখানো পথে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি। আমরা একটি মেয়েকে বিশ-বাইশ বছর লালন-পালন করে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দুইটি পারিবারের সম্মতিতে অচেনা, অজানা এমনকি যাকে কখনো দেখিনি, যার কথা কোন দিন শুনিনি এমন একজন ছেলের কাছে বিবাহ দিয়ে থাকি।

এই মেয়েটি পিতা মাতাসহ বাড়ির সবার কাছে একদিনস আদরের পত্রী ছিল। সবাই মেয়েটিকে উল্লেখ করে বলতেন এই মামুনি এটা করো, এটা দেখো, কোথায় তোমার মা, এটা নিয়ে এসো, স্কুলে কখন যাবে, কলেজে কখন যাবে, ইউনিভার্সিটিতে কখন যাবে, তোমার কোচিং আছে কী, কি খাবে, কি নাস্তা নিবে, ঈদ আসলে নতুন জামা কাপড় পছন্দ মতো উপহার দেয়াসহ নানাবিধ সম্পর্কে তাকে আদর উৎসাহ উদ্দিপনা দিয়ে ২০/২২ বছর বা আরো বেশী সময় ধরে তিলে তিলে বড় করি। সেই মেয়েটি একদিন সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা পরিবেশে হঠাৎ যাওয়া, আপনজনকে ছেড়ে হঠাৎ রাত্রিযাপন করা, যে নাকি এক রাতের জন্যও বাড়ির বাহিরে রাত কাটায়নি অথচ তাকে আজ আপন পিতা-মাতা ভাই-বোন, চাচা/চাচি, মামা/খালা, ফুফা/ফুফিদের ছেড়ে শ্বশুড় বাড়ি থাকতে হয়েছে। সেই মেয়েটিকে আমরা-আপনারা কিভাবে বরণ করবো। তা আমার-আপনার বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি ও একান্ত মনের ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে।

একবার চিন্তা করে দেখুন। আমরা আজকাল প্রায়শই পত্র পত্রিকায় দেখি শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী, ননদ, জা এমন কি তাদের বাড়ির লোকজন যাকে পুত্র বউ করে নিয়ে আসা হয়েছে তার সাথে কাজের মেয়ের মতো রুঢ় আচরণ করে থাকে। একদিন, দুইদন, এক মাস, দুই মাস, এভাবে বছর গড়াতে থাকে। মেয়েটি মুখ বন্ধ করে সহ্য করে দিন কাটায়। একটি নতুন বউর সাথে কেন এমন খারাপ আচরণ করেন। মনে রাখতে হবে, যাকে ঘরের বউ করে নিয়ে আসা হয়েছে সেও আপনার মতো, আমার বা আপনার পরিবারের সদস্যদের মতো রক্ত-মাংসে গড়া একজন নারী। মেয়েটি একদিন আমাদের বা আপনাদের দেখানো পথেই হাঁটবে। নিজে ভালো তো জগত ভালো। আগে আমাদের নিজেদের ভালো হতে হবে।

একটি উদাহরণ দিচ্ছি প্রত্যেকেই কমবেশী নদীর জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে জানি। ঐ জোয়ার ভাটার বাঁধ যদি একবার ভেঙ্গে যায় তাহলে ঐ বাঁধ দেয়া আর সম্ভব হয় না। কারণ যেখানে পানির শ্রোতের তীব্রতা সেখানে বাঁধ দিলেও সহজে তা রক্ষা করা যাবে না। তদ্রুপ ঐ বউ করে আসা মেয়েটির ধৈয্যের বাঁধ যদি একবার ভেঙ্গে যায় তা তাহলে তা থামানো কষ্টকর। তাই তার সাথে ভালো ব্যবহার, ভালো আচরণ করতে হবে তাহলে অবশ্যইে আমার- আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে মেয়েটি ভালো ব্যবহার করবে ও ভালো থাকবে। কিন্তু আমরা – আপনারা যদি তার সাথে কাজের মানুষের মতো ব্যবহর করি তাহলে সে কখনোই আমাদের-আপনাদের সাথে মিশতে পারবে না এবং তার থেকে ভালো ব্যবহার আশা করতে পারি না।

পরিশেষে, আমরা-আপনারা সবাই একদিন বউ ছিলাম, একদিন শ্বাশুড়ী হবো। মনে রাখতে হবে যে, আমরা কারো না কারো বাবা, মা, আবার কারো না কারো শ্বশুড় – শ্বশুড়ী। তাই সবাকে সবেই ছাড় দিতে হবে। তাহালে আমাদের কারোই আর বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না।

লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, একান্ত সচিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারপারসন, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য