Wednesday, June 25, 2025
Homeদেশগ্রামটাঙ্গাইলে ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলে ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে। মাঘী পূর্ণিমায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যা মানুষের মুখে মুখে ডুবের মেলা নামে পরিচিত। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার রাশড়া-সৈয়দামপুর গ্রামে বংশাই নদীর পূর্ব-উত্তর তীরে বুধবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ডুবের মেলা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলা উপলক্ষে নদীর তীরে দেবতা (মাদব ঠাকুর) এর মূর্তি অধিষ্ঠিত করেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পাপ মোচন উপলক্ষে ভোরে মানত ও স্নান পর্ব সমাপণ করেন। মেলায় জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আগত জনগনের পূজা ও স্নান পর্বে অংশগ্রহণ এবং কেনাকাটার দৃশ্য লক্ষনীয়। ডুবের মেলায় বসে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাঁশবেত, কাঠ- মাটির তৈজস ও আসবাবপত্রের দোকান। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার খাবার এবং ছোটদের আকর্ষণীয় খেলনা ও ব্যবহার্য্য জিনিসপত্রের দোকান।
স্থানীরা জানান, এই মেলা ব্রিটিশ শাসনামলে (বক্ত সাধু) নামে খ্যাত এই সন্যাসী (মাদব ঠাকুর) এর মূর্তি প্রতিস্থাপন করে পূজাঅর্চনা শুরু করেন। এই পূজা উপলক্ষে তখন থেকে গঙ্গাস্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তখন থেকে ইহা (ডুবের মেলা) নামে পরিচিত। ডুবের মেলায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গঙ্গাস্নান উৎসব চলে। নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী স্নান উৎসবে অংশ নেন। মেলা উপলক্ষে আগের দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসেন।
মেলায় আসা অজিত পাল বলেন, ছোট সময় থেকে দেখে আসছি এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কয়েক বছর পর মেলায় আসলাম। সকালে স্নান করেছি। এখন মেলায় ঘুরতেছি। অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। সকালে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ স্নান করেছে। যমুনা রানী পাল বলেন, আজ মাঘী পূর্ণিমা। এই মাঘী পূর্ণিমার মধ্যে ডুবের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় এসে গঙ্গাস্নান ও পূজা দিয়েছি। মাঘী পূর্ণিমায় উপাস রয়েছি। কেউ যদি উপাস থাকে, গঙ্গাস্নান ও পূজা দিয়ে খেতে পারে। ছোটদের খেলনার দোকানদার সুকুমার সাহা বলেন, ছোট সময় বাপ-দাদার সাথে ডুবের মেলায় আসতাম। এখন দোকান নিয়ে আসি। সকালে বেঁচাকেনা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেঁচাকেনা বেড়ে যায়। বেচাকেনা ভালোই হয়।
মাছ বিক্রেতা অমল মালো বলেন, আমি মেলায় তিন রকমের মাছ বিক্রি করছি। সকালে আসছি ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। মাছ প্রায় শেষের দিকে। ডুবের মেলায় প্রতি বছর মাছ বিক্রি করতে আসি।
ডুবের মেলার আয়োজক জীবন মন্ডল বলেন, এই মেলা যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে। আমি ৬০ বছর ধরে মেলার আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছি। আমার আগে বাপ দাদারা ডুবের মেলা আয়োজন করেছে। ডুবের মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষে আসেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন বয়সের মানুষ গঙ্গাস্নানে অংশগ্রহণ করেন। ডুবের মেলায় যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকতো তাহলে ডুবের মেলা জনপ্রিয়তা অর্জন করতো। রাস্তা না থাকার কারণে জমির আইল ধরে মানুষ আসতেছে।
বাসাইলের কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন বলেন, ডুবের মেলা আমার ইউনিয়নের সৈয়দামপুরে বংশাই নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বপুরুষ থেকেই এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মাঘীপূর্ণিমায় ডুবের মেলা পালন করে থাকেন। মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ মেলা দেখতে আসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য