আজ ১৭ই মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৪১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত থেকে ১৯৮১ সালের এই দিনে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য। কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর এলাকাজুড়ে ছিল লাখো লাখো সাধারন মানুষের পথচারনায় মূখর। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে দিশেহারা আওয়ামী লীগ পেয়েছিল আলোর দিশা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন দিনের আগমনী বার্তা। তাই তো সেদিনের মেঘের গর্জন, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির পিতার হত্যার বদলা নেওয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল। অবিরাম মুষলধারে ভারী বর্ষণে যেন ধুয়েমুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃহত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। স্বাধীনতার অমর স্লোগান-‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল, ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।
এদিকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। তার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি তাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা দেশে এসেছিলেন বলেই অবরুদ্ধ গণতন্ত্র শৃঙ্খলামুক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা এসেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশে এসেছিলেন বলেই পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান, আগামী মাসেই এই সেতুর উদ্বোধন করা হবে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে দিতে, বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা শুরু করে নানামুখী নীলনকশা। বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে কালো অমানিশা। এমনই এক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ওই দিনটি ছিল রোববার। সারা দেশ থেকে আসা লাখো মানুষ সেদিন তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান, ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখো মানুষের সংবর্ধনার জবাবে সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফেরার আগেই ওই বছরের (১৯৮১) ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনার পথ মসৃণ ছিল না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। দেশে ফেরার পর দীর্ঘ ৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।
দিবসটি কর্মসূচিঃ দিবসটি উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং একইসঙ্গে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সকাল ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় জাতীয় নেতারা ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য রাখবেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনও দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করবে।