Monday, June 23, 2025
Homeঅপরাধ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে ও তার...

৭০ বছরের ওই বৃদ্ধকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে ও তার পুত্রবধূ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড এক বৃদ্ধ রাস্তায় ঘুরছিলেন লাঠিভর দিয়ে। পরনে জামাও ছিল না। ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধের নাম হাজি মো. ওসমান গনি। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড মধুপুর গ্রামে। তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে ও তার পুত্রবধূ। ওই বৃদ্ধের গড়া নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না। তাকে ঘুমাতে হচ্ছে এলাকার চায়ের দোকানে।

শনিবার বিষয়টি স্থানীয়রা সংবাদকর্মীর সহায়তায় ওই বৃদ্ধ ও কয়েকজন লোকের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এটি রায়পুর থানার ওসি ও ভাইস চেয়ারম্যানের নজরে আসে।

জানা যায়, বৃদ্ধ ওসমান গনি দীর্ঘদিন বিদেশ ছিলেন।  প্রায় পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। তার সব সম্পদ তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে ভাগ করে দেন। তিনি তিন ছেলের ঘরে খাওয়া-দাওয়া করতেন। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ২০ দিন আগে বৃদ্ধ ওসমান গনির সঙ্গে পুত্রবধূ কহিনুর আক্তারের কথা কাটাকাটি হয়। পরে স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে ছেলে আবদুল খালেক ঘাড় ধাক্কা দেন বাবাকে।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘর থেকে বৃদ্ধ বাবাকে বের করে দেয় ছোট ছেলে বদমেজাজি আবদুল খালেক। পরে নিরুপায় বৃদ্ধ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান।নিরুপায় হয়ে গত ২০ দিন ধরে মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি ও স্বজনদের বাসাবাড়িতে গিয়ে থেকেছেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে ওই বৃদ্ধ তার ঘরে ঢোকেন। এ সময় বদমেজাজি ছেলে আবদুল খালেক ও তার স্ত্রী বৃদ্ধকে ঘর থেকে আবারও বের করে দেয়। পরে বৃদ্ধ ওই রাতে বাড়ির পাশে চা দোকানে ঘুমান।

এ ঘটনায় বৃদ্ধ কয়েকজন গ্রামবাসীকে বিষয়টি বলেন। পরে এক সংবাদকর্মীর মাধ্যমে জানতে পেরে ওসি ও ভাইস চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে নিজ বাড়িতে ঠাঁই মিলেছে বৃদ্ধের। oবৃদ্ধ ওসমান গনি বলেন, ছয় সন্তানের মা মারা যাওয়ার পর তিনি আর বিয়ে করেননি। এর পর থেকেই তার ওপর ছোট ছেলে আবদুল খালেক ও তার পুত্রবধূর অবহেলা শুরু হয়। অবশেষে ঘর থেকেই বের করে দেয়।

এ ব্যাপারে রায়পুর থানার ওসি আবদুল জলিল বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি ওই বৃদ্ধের ঘটনাটি সাংবাদিকের কাছে শুনে ও ভিডিও দেখে তার বাড়িতে কর্মকর্তা পাঠাই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাকে বাড়িতে রেখে আসি। ভবিষ্যতে ওই ছেলেরা ও তার স্ত্রীরা যদি তার বাবার সঙ্গে এ ধরনের কাজ আবারও করে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কারণ বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সন্তানের। কোনো সন্তান বাবা-মায়ের দায়িত্ব না নিলে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। তাই শুধু এখানেই নয়, সারা দেশে সোশ্যাল ক্রাইসিস হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হতে পারে। কারণ হলো মনস্তাত্ত্বিকভাবে সংকটাপন্ন মানুষ যখন আরও বেশি সংকটে পড়ে, তখন পরিবারের একটু দুর্বল, যারা তাদের ওপর মানসিক নির্যাতনের সুযোগ তৈরি হয়।

তখন সংসারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও কর্মহীন মানুষ উপেক্ষিত ও অবহেলিত হতে পারে। এসব আমাদের সবারই নজর দেওয়া উচিত।

রায়পুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন জাকারিয়া বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সন্ধ্যায় ওই বৃদ্ধকে তার বাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে ছোট ছেলে ও পুত্রবধূর লিখিত অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য