বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সোয়া ৭টার দিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় রাজধানীর পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। হাজির করা হয়েছে। সকাল ৬টা থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, তিন মামলায় মোট ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক মামলায় ১৭, অন্যটিতে ১৩ এবং তৃতীয়টিতে চারজনের নাম রয়েছে। দু’টি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোট ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে হেফাজতে রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে আজ আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে, সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টন, হাইকোর্ট মাজারগেট ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানান, হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরের দিন আজ নির্ধারিত ছিল। কেউ হাজির না হলে তাদের বিষয়ে দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আর যদি হাজির হন এবং আদালত জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন, তাহলে কোন কারাগারে থাকবেন তা নির্ধারণ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা অধিদফতর।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গুম, নির্যাতন ও টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে বন্দি রাখার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। গত ৮ অক্টোবর এ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়।
একই দিন জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা ‘আয়নাঘর’-এ গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তারিক রহমানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলার অভিযোগ দাখিল করা হয়। এছাড়া জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবি কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।
সবমিলিয়ে এ তিন মামলায় ২৫ সেনা কর্মকর্তার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৯ অক্টোবর সেনা সদর থেকে জানানো হয়, তাদের মধ্যে ১৫ জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং আজকের মধ্যে আসামিদের হাজিরের নির্দেশ দেয়।