মো. মহিউদ্দিন আল-হেলাল বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের প্রয়োজনে ছোট বেলায় গিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসের সামনে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে ভয়ে ঢোকার সাহস করেননি। সেই ভয় আর চিন্তা চেতনাকে মনে ধারণ করে চালিয়ে যান পড়াশুনা। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বড় হয়ে নিজেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বনে যান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হয়ে মানুষের মাঝে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভীতি দূর করতে চাকরির প্রথম কর্মস্থল পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সাধারণ মানুষকে পরিবার মনে করে ভালোবাসতে শুরু করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল-হেলাল এক বছরের কর্ম সময়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে অর্ধশত বাল্যবিয়ে বন্ধ, ঘুস-দুর্নীতি রোধ, মাদক ও শিক্ষানীতিতে জিরো টলারেন্স, অসহায় সাংবাদিক পরিবারের পাশে দাঁড়ানো ও নিজের বিনয়ী আচরণ এবং নিজ দায়িত্বের বাইরে অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে বেশ প্রশংসিত হন । হন শ্রেষ্ঠ জেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
এক বছরের কিছু বেশি সময় এ উপজেলায় চাকরির পর গত ১ মার্চ ছিল ওই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের শেষ কর্মদিবস। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী করা হয় বদলি। দায়িত্ব দেয়া হয় পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপজেলার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল-হেলালের বিদায় উপলক্ষ্যে সুধী সমাজের ব্যানারে ৩মার্চ শুক্রবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ওই সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল মাহমুদ লিটন। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহধর্মিণী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর আহমেদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিকদার গোলাম মোস্তফা।
বিদায় সংবর্ধনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল-হেলাল তার এক বছর কর্মজীবনের নানা দিক বক্তব্যে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ছোট বেলায় বাবা হারানোর স্মৃতিসহ দশমিনায় তার নানাবিধ কর্মকাণ্ডের দিক তুলে ধরে বক্তব্যর এক পর্যায়ে কেঁদে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সৃষ্টি হয় আবেগ-আপ্লুতকর পরিস্থিতির।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন কান্নায় উপস্থিত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষও কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিদায় সংবর্ধনা শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে শেষ বারের মতো সূধীজনের বিদায় জানানোর সময় শুরু হয় আরও হৃদয় বিদারক দৃশ্যর। এসময় তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল-হেলালের বিদায়ের খবরে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে আবেগঘন লেখালেখি। অনেকে তাকে অত্যন্ত সৎ ও বিনয়ী দাবি করে তার বিদায় যেন মেনে নিতেই পাড়ছেন না।