বন্ধ হয়ে যাওয়া মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের সাবেক এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে ই-কমার্সের নামে ডিজিটাল ফরম্যাটে এমএলএম ব্যবসা করে নতুন প্রতারণার মাধ্যমে দশ মাসেই হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ২৬৮ কোটি টাকা। মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার। প্রতারিত হয়েছেন ২২ লাখের বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে পাঁচ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি আছেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড ই-কমার্সের নামে অনুমোদনহীন এমএলএম ব্যবসা শুরু করে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা অ্যাপস তৈরি করে পণ্য বিক্রির নামে মানুষের কাছ থেকে প্রথমে এক হাজার ২০০ টাকা করে সদস্য করে। এরপর কমিশনপ্রাপ্তির কথা বলে আরও তিনজনকে সদস্য করতে বলে।
এভাবে তাদের কার্যক্রম পিরামিড আকারে চলতেই থাকে। এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে সাত-আটশ’ টাকার পণ্য দেয়। সেসব পণ্যেরও অনুমোদন নেই। তারা সব পেমেন্ট ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করে থাকে।
অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ই-কমার্সের নামে জানুয়ারি থেকে প্রতারণা শুরু করে একটি চক্র। এসপিসি ওয়ার্ল্ড লিমিটেড নামে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আল আমিন প্রধান ডেসটিনির সাবেক কর্মকর্তা। একটি অ্যাপস দিয়ে সে এই ব্যবসা শুরু করে। চক্রের মূল হোতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হল- আল আমিন প্রধান (এমডি ও সিইও), মো. জসিম (নির্বাহী অফিসার). মো. মানিক মিয়া (ম্যানেজার, হিসাব), মো. তানভীর আহমেদ (ম্যানেজার, প্রডাক্টস); মো. পাভেল সরকার (সহকারী ম্যানেজার (প্রডাক্টস) এবং অফিস সহকারী নাদিম ও ইয়াসির উল্লাহ। গোয়েন্দা কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার জানান, ২৬ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগানের এফ হক টাওয়ারে কোম্পানির অফিসে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিম অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা হয়। ২ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থেকে মূল হোতা আল আমিন প্রধান ও জসিমকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি, দুটি পিকাপ ভ্যান, সার্ভারে ব্যবহৃত ছয়টি ল্যাপটপ, দুটি রাউটার, দুটি পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
ডিবি জানায়, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড ই-কমার্সের লাইসেন্স নিয়ে ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১০ মাসে সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে ২২ লাখ ছাব্বিশ হাজার ৬৬৮ সদস্যের আইডি থেকে প্রায় ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ব্যবসা কার্যক্রম অনলাইন অ্যাপভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরেও ১৭টি দেশের বাংলাদেশি প্রবাসী ও বিদেশি পাঁচ লাখ সদস্য রয়েছে। ডিবি আরও জানায়, মূলত কোম্পানির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে শত শত পোস্টের মাধ্যমে ই-কমার্সের কথা বলে সাধারণ জনগণকে লোভনীয় কমিশনের কথা বলে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তারা। আগ্রহীদের প্লে-স্টোর বা ইন্টারনেট থেকে এসপিসি (SPC-World Express Ltd.) নামে একটি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
রেজিস্ট্রেশন করার সময় বাধ্যতামূলক পূর্ববর্তী রেজিস্ট্রেশন করা আপলিঙ্ক আইডির রেফারেন্সে কোম্পানি প্রদত্ত বিকাশ, নগদ, রকেট নম্বরে অ্যাকাউন্টের প্রতিটি আইডির জন্য ১২০০ টাকা দিতে হয়। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের কমিশন যেমন- রেফার কমিশন, জেনারেশন কমিশন, রয়্যাল কমিশন ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে।






















