ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোল শহরে পরাজিত হলে সেটি হবে রাশিয়ার জন্য কৌশলগত বিজয়। শহরটি থেকে ক্রিমিয়ায় সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন রুশ সেনারা।
সোমবার এরই ধারাবাহিকতায় মারিওপোলে ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয় মস্কো। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে কিয়েভ জানায়, শেষ সেনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত লড়াই চলবে। খবর বিবিসি, এএফপি ও স্পুতনিকের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মারিওপোল আজভ সাগরের তীরে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্রথমত সেখানে পরাজয় হলে আজভ সাগরের সঙ্গে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ইউক্রেন। দ্বিতীয়ত এটি যুদ্ধে রাশিয়াকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। ক্রিমিয়ায় পানি সরবরাহের যে খালের মুখে ইউক্রেন বাঁধ দিয়েছে, সেটি খুলে দিতে পারবে রাশিয়া। যে কারণে এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে থাকা দেশগুলোর নজরও এখন মারিওপোলের দিকে।
মারিওপোলে আটকেপড়া বাসিন্দারা বলেন, তাদের শহরটি এখন কার্যত পৃথিবীর বুকে এক নরক। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শহরটি অবরোধ করে রেখেছে রুশ বাহিনী। সেখানে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
আত্মসমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর রাশিয়া হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এখন মারিওপোল শহর ও সেখানে আটকেপড়া বাসিন্দাদের কপালে কী ঘটবে, তা নিয়ে গভীর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ শহরটিতে এখনও তিন লাখের মতো মানুষ রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মারিওপোলের মানবিক পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে সেখানকার এমপি ইয়ারোস্লাভ জেলেজনিয়াক বলেছেন, শহরটি এখন কার্যত পৃথিবীর বুকে এক টুকরো নরকের মতো। তিনি বলেছেন, পুরো শহরটি ঘিরে রয়েছেন রুশ সেনারা। বিদ্যুৎ নেই, পানি সরবরাহ নেই। খাবার ও ওষুধের মজুত খুবই কম। মানুষ খাবার কষ্টে ভুগছে এবং রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থলপথ ছাড়াও আকাশ ও সাগর থেকে পর পর রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা এসে পড়ছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি ১০ মিনিটে একটি গোলা আঘাত করছে। প্রাণ বাঁচাতে অধিকাংশ মানুষ এখন ঠাণ্ডা আর অন্ধকার বম্ব-শেল্টার, বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে। শহরের কেন্দ্রে ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও রুশ বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছে না। শহর থেকে তাদের পালানোর সুযোগও নেই।
মারিওপোল শহরের মেয়র ভাদিম বোভচেঙ্কো বিবিসিকে বলেন, শহরের ৮০ শতাংশ আবাসিক ভবন হয় বিধ্বস্ত হয়েছে, না হয় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে আছে। বোমা ও গুলির ভয়ে লাশ সৎকারও করা যাচ্ছে না।
তবে রাশিয়ার অভিযোগ, মারিওপোলের পরিস্থিতির দায় ইউক্রেনীয়দের ও দেশটির উগ্র জাতীয়তাবাদীদের। তারাই বেসামরিক মানুষকে নিরাপদে চলে যেতে দিচ্ছে না, জিম্মি করে রেখেছে।