Monday, June 23, 2025
Homeশীর্ষ সংবাদ১০ টাকায় চোখের সব জটিল চিকিৎসা ও অপারেশন

১০ টাকায় চোখের সব জটিল চিকিৎসা ও অপারেশন

এস মেজবাহউদ্দিন

ঢাকার আগারাঁও অবস্থিত জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল । সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য চক্ষু চিকিৎকসার স্থান। বেসরকারী হাসপাতালের হাজার হাজার টাকার চিকিৎসা মাত্র ১০ টাকায়। অবিশ্বাস্য নয় সত্যি। আধুনিক চক্ষু সেবা প্রদান ও ডাক্তার তৈরির সুতিকাগার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক চক্ষু সেবায় বিশেষায়িত এই হাসপাতালটির যাত্রা। অল্প দিনের মধ্যেই চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসক তৈরির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে পরিচিতি লাভ করে। ২৫০ শয্যার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০ টাকার টিকিটে মেলে চোখের সব চিকিৎসা। সাথে রোগীদের সব ওষুধ বিনা মূল্যে হাসপাতাল থেকে প্রদান করা হয়। অপারেশন করা রোগীদেরও সব ওষুধ বিনা মূল্যে হাসপাতাল থেকে প্রদান করা হয়। অপারেশনের রোগীদের স্বল্প মুল্যে অতীব প্রয়োজনীয় ৩/৪ টা টেষ্ট করা হয়।

বেসরকারি হাসপাতালে যে অপারেশনে লাগে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা, সেখানে তা হচ্ছে বিনা মূল্যে। আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। অপারেশন তো হয়-ই, রোগীদের সব ওষুধও হাসপাতাল থেকে ফ্রি দেওয়া হয়। রোগীদের পরীক্ষানিরীক্ষাও হচ্ছে বিনা মূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে। অপারেশনও নিয়মিত হচ্ছে।

১২টি অপারেশন থিয়েটারে সাত ধরনের অপারেশন হয়। অত্যাধুনিক মেশিনে প্রতিদিন ছানিসহ কমপক্ষে ৮০টি অপারেশন হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন আড়াই থেকে ৩ হাজার রোগী এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন চিকিৎসাসেবার জন্য। দালালের কোনো উপস্থিতি এই হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। দালাল নিয়ন্ত্রণ করতে মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক তৎপর থাকে। জরুরি বিভাগ খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। এ হাসপাতালের ৯টি বিভাগ চালু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—ক্যাটারাক্ট, কর্নিয়া, গ্লুকোমা, রেটিনা, অকুলোপ্লাস্টিক, পেডিয়াট্রিক অপথোমোলজি, নিউরো অপথোমোলজি, কমিউনিটি অপথোমোলজি ও লোভিশন।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, তুলছে।১০ টাকার টিকিট কিনে এ হাসপাতালে চোখের সব ধরনের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়। সর্বাধুনিক চিকিৎসা উপকরণ, দক্ষ চিকিৎসক ও উন্নত চিকিৎসাসেবাই প্রতিষ্ঠানটিকে দেশে এবং বিদেশে পরিচিত করে এই হাসপাতালে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার জন্যও রয়েছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। রোগীদের সব ওষুধ বিনা মূল্যে হাসপাতাল থেকে প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, কোনো ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও দালালের তৎপরতা এই হাসপাতালে নেই। কোনো ডাক্তারই রোগীদের বাইরে পাঠান না। চোখের সব ধরনের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা এখানে আছে। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে কোনো ডাক্তার বা কোনো স্টাফকে দুর্নীতি করার সুযোগ দেব না। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। সে যেই হোক না কেন। এই হাসপাতালের মালিক জনগণ। আর জনগণকে সেবা দেব আমরা।

মাত্র ১০ টাকার টিকিট কেটে চিকিৎসাসেবা নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন নারীরা।এই হাসপাতালে কোন কোন অপারেশনের জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়, যার মূল্য ১২ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৬০ জন রোগীর ছানি অপারেশন হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ফ্যাকো সার্জারির মাধ্যমে এখানে চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। এতে করে রোগীকে সাধারণত সকালে অপারেশন করে বিকালে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চোখের যে কোন ধরনের জটিল অপারেশন এখানে হয়।

 ১০ টাকার টিকিট কাটলেই রোগীর দায়িত্ব শেষ। বাকি সব চিকিৎসা বিনা মূল্যে প্রদান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চোখের লেন্সও ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। অপারেশনে রোগীর প্রয়োজনীয় সব ওষুধ বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়। এমনকি রোগীকে যখন ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তখনো বাসায় গিয়ে রোগীর যেসব ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় সেগুলোও বিনা মূল্যে প্রদান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাইরে থেকে ওষুধ ক্রয়ের প্রেসক্রিপশন কোন ডাক্তারই করেন না।

 চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কোন ডাক্তার এই হাসপাতালে নেই। অধিকাংশই চোখের ওপরে এমডি, এফসিপিএস ও উচ্চতর ডিগ্রিধারী। ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ খোলাসহ যে কোন সরকারি বন্ধ ছাড়াই প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন। যদিও এদের পদ মেডিক্যাল অফিসার, কিন্তু তাদের প্রত্যেকের চক্ষু বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে।

ঢাকার আদাবর থেকে আসা রত্না (৭০) বলেন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০ টাকায় টিকিট কেনার পর, ডাক্তার দেখাই, ডাক্তার বলেছে, তার চোখে ছানি পরেছে। বেসরকারী একটি হাসপাতালে দেখানোর পর সেখানে ডাক্তারও বলেছে বাম চোখে ছানি পরেছে, অপারেশনে ৩০ হাজার টাকা লাগবে। আমি গরীর মানুষ, আমার স্বামী নাই, আমার ছেলে একটি রিক্সার গ্যারেজে কাজ করে। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আমার ছানি অপারশেন করেছি আমার কোনো টাকা-পয়সা লাগেনি। আমি আখেন চোখে ভাল দেখি।  

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগের এক আবাসিক সার্জন বলেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক রোগী চোখের চিকিৎসা নিতে এই হাসপাতালে আসেন। এর মধ্যে যাদের অপারেশনের প্রয়োজন হয়, তাদের অপারেশনের জন্য নির্ধারিত তারিখ দিয়ে দেওয়া হয়। নির্ধারিত দিনে অপারেশন করা হয়। একই সঙ্গে রোগীর পরীক্ষানিরীক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়। এখানে এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব, ইসিজি, সিটিস্ক্যান ও আলট্রাসনোগ্রামসহ সব ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য