Tuesday, December 16, 2025
Homeদেশগ্রামমাদক উদ্ধার ও মামলা তদন্ত নিষ্পত্তিকরণে রেকর্ড কক্সবাজার জেলা পুলিশের

মাদক উদ্ধার ও মামলা তদন্ত নিষ্পত্তিকরণে রেকর্ড কক্সবাজার জেলা পুলিশের

এযাবত কালে দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার চালান উদ্ধারে রেকর্ড করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। এ ছাড়া মামলার তদন্ত নিষ্পত্তি, ওয়ারেন্টমূলে আসামি গ্রেফতার, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, ক্লু-লেস ঘটনার তথ্য উদঘাটনে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।

২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরে চৌফলদণ্ডি ব্রজি এলাকা ও শহরের নুনিয়ারছড়ায় অভিযান চালিয়ে ১৭ লক্ষ ৭৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার ও নগদ এক কোটি ৭১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করে পুলিশ। এ সময় আটক হয় চার জন ইয়াবা কারবারী যা দেশের ইতিহাসে এ যাবত কালের র্সববৃহৎ ইয়াবার চালান।

পর্যন্ত জেলা পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে ৮৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭৬৮ টি ইয়াবা উদ্ধার হয়। এছাড়া দুই লাখ ২০ হাজার অগ্নিদগ্ধ ইয়াবা, পাঁচ কেজি ১৬০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ, ১৩৭ বোতল বিদেশী মদ ও ১৯২৬ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করে পুলিশ। এক হাজার ৫০৯টি মাদকের মামলায় দুই হাজার ১৩ জন আসামি গ্রেফতার হয়। আগ্নেয়াস্ত্র ১৪১টি, গুলি ৭৪৭ রাউন্ড, কার্তুজ ১০৬ রাউন্ড এবং ৮টি ম্যাগজিন উদ্ধার হয়। জেলার ৯ থানায় ১৮১টি অস্ত্র মামলায় ৩২৭ আসামি গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তদন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ৮৫১টি মামলা।

বিদেশগামীরা ও ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ পেয়েছে সহজে। দালালের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হয়নি কেউ। এই সময়ে ১৬ হাজার ৩৩৪টি ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ ও তিন হাজার ৩৩৫ জনের চাকুরির ভেরিফিকেশন প্রদান করা হয়। ৩৬ হাজার ৬৮৩টি ‘পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন’ প্রদান করে জেলা পুলিশের বিশেষ (ডিএসবি) শাখা।

জেলা পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রের দেওয়া তথ্য মতে, পরিবর্তিত নতুন সেটআপে নিয়মিত মামলায় ১৩ হাজার ৭৫৩ এবং ওয়ারেন্টমূলে ২২ হাজার ৯৬২ জন আসামি গ্রেফতার হয়। ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে উপকৃত হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৩৭ জন সাধারণ মানুষ। সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণে মামলা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। আদালতে বাড়ে জটিলতা। বিভিন্ন মামলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দক্ষতা ও কৌশলগত কারণে ২৫ হাজার ৫৫০ জন সাক্ষী আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছে। যে কারণে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন সংশ্লিষ্ট বিচারকগণ।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর এসপি থেকে শুরু করে জেলা পুলিশে কর্মরত সবাইকে একযোগে বদলি করা হয়। সেপ্টেম্বরের শেষে দায়িত্ব নেয় নতুন টিম। কঠিন পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণে শক্তহাতে হাল ধরে তারা। এসপি মো. হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ প্রায় ১ বছর ১১ মাস পার করেছে। অভ্যন্তরীণ ‘চেইন অব কমান্ড’ ধরে রেখে এগুচ্ছে জেলা পুলিশ। পুলিশের হারানো ইমেজ ও ফিরে এসেছে সাধারণ জনগণের মাঝে। সবার জন্য নতুন কর্মস্থল হলেও পুরো জেলাকে ‘চকআউট’ করে মাঠ গুছিয়েছে কর্মকর্তারা। পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সবার সক্রিয় কর্মতৎপরতায় জেলা পুলিশ আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে চিহ্নিত অপরাধীচক্র অনেকটা ‘কোমরভাঙা’ হয়ে গেছে। সন্ত্রাসী, কিশোরগ্যাং দমনে জেলা পুলিশের তৎপরতায় আশান্বিত পর্যটন নগরের বাসিন্দারা।

অনুসন্ধানের তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলার প্রতিটি থানা এখন পুলিশিং সেবাবান্ধব ও দালালমুক্ত। যার কাজ সেই করছে। থানাকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিনের অনৈতিক সুবিধাভোগিরা পাত্তা পাচ্ছেন না। পুলিশের জ্ঞাতসারে মিথ্যা মামলার শিকার হয়নি কেউ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করি। জনবান্ধব পুলিশি কার্যক্রম নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল। সেটি মাথায় রেখে আমরা কাজ শুরু করি। জেলার ৯টি থানায় কর্মরত ওসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতা সহকারে দায়িত্ব পালন করছে। যে কারণে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে।

ভুক্তভোগিদের জন্য থানার দরজা ২৪ ঘন্টা উন্মুক্ত মন্তব্য করে এসপি বলেন, ভুক্তভোগিরা যার কাজ সে করছে। দালাল-প্রতারক, টাউট-বাটপার শ্রেণির লোকজন থানার আশেপাশেও ঘেঁষতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক লোক, নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পুলিশের সেবা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও জনবান্ধব করতে ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ভুক্তভোগিরা উপকৃত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জেলার ৯টি থানাতেই পুলিশের জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভুক্তভোগি নিজেই থানায় গিয়ে সেবা পাচ্ছে। যুক্তিসঙ্গত সব আবেদন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়।

এসপি মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মাঝেমধ্যে কিছু অপরাধীচক্র ও তাদের দোসররা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ায়। মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়। তারা কারা, চিহ্নিত।

তিনি বলেন, অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর। ভুক্তভোগিদের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য