মোঃ রফিকুল ইসলাম
বীমা মানেই ঝুঁকি এবং এই ঝুঁকির মধ্য দিয়েই জীবনে সাফল্য অর্জন। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ রয়েছে No Risk No Gain. পৃথিবীতে যে যত বড় হয়েছেন সে তত বেশী ঝুঁকি নিয়েছেন। ঝুঁকি না নিলে কোন কিছুই অর্জন করা যায় না। একজন সফল কৃষক নানাবিধ প্রাকৃতিক ঝুঁকি নিয়ে বীজ বোপন করেছেন। ঝুঁকি নিয়ে ফসল উৎপাদন করেন। প্রাকৃতিক কারণে ফসলের অন-উৎপাদনশীলতায় যেমন কেঁদেছেন তেমনি ভালো উৎপাদনে মুখে হাসি ফোটেছে। তদ্ররুপ একজন জেলে ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে জাল ফেলেন। একজন ডাক্তার কঠিন পরিশ্রমের ঝুঁকি নিয়ে লেখেপড়া করে ডাক্তার হয়েছেন। একজন বৈমানিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিমান চালনা করে জীবনে সাফল্য পেয়েছেন। একজন গাড়ী চালক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ী চালিয়ে সফলতা অর্জন করেন। একজন ব্যবসায়ি ঝুঁকি নিয়ে কোটি কোটি টাকার পুঁজি খাটিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যবসা করেন। তাঁর ব্যবসায় তিনি যেমন লাভবান হন তেমনি বেকার সমস্যা দূরিকরেণে সরকার ও জাতিকে সহযোগীতা করে থাকেন। তাঁরা নিজের বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মানুষের উপকার করেন। এক কথায় প্রতিটি মানুষই ঝুঁকি এবং আশা নিয়ে কাজ করেন। আশাই সকলের মনে আলো জাগায়। প্রত্যেকেই সরকারকে কোন না কোন ভাবে সহযোগীতা করেন। প্রত্যেক মানুষই তাঁর ব্যক্তিগত সামথ্যের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করেন। আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন জীবিকার তাকিদে দেশের বাহিরে গিয়েছেন। নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে গমন করে দেশের লক্ষ্য অর্জনে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। প্রেরণ করেছেন লক্ষ কোটি ডলার। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সে দেশের রিজার্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঝুঁকি বহন করতে হয় এবং এই ঝুঁকির মধ্যেই সাফল্য আসে।
আমরা যারা বীমা কোম্পানীতে চাকুরী করি, আমরা কত বড় ভাগ্যবান। দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে সম্পদ থাকলেই বীমা করতে হবে। অর্থাৎ বিদেশ থেকে মালামাল আনায়নে এবং বিদেশে মালামাল প্রেরণে বীমার কভারনোট/বীমা পলিসি নিতেই হবে এবং বীমা কভারনোট ছাড়া কাষ্টমস/পোর্ট অথরিটি মালামাল খালাস করতে দিবে না। এল/সি-তে উল্লেখ থাকতে হবে কত ডলার, কি ধরণের মালামাল এবং মালামালের পরিমান। তাছাড়া ব্যক্তিগত মোটর গাড়ী ও কমার্শিয়াল ভ্যাহিক্যালের বীমাও অত্যাবশ্যক।
কথায় আছে আমরা কাগজের ব্যবসা করি। কথাটি হাস্যকর হলেও সত্য। অন্যান্য ব্যবসার মতো মূলধন খাটাতে হয় না। বিনা মূলধনে যে ব্যবসা তা বীমা ব্যবসা। বীমা কর্মীদের ব্যবহার এবং নিজের প্রতিষ্ঠানের সুফলগেুলো বীমা গ্রহীতার কাছে তুলে ধরা বীমা ব্যবসার অন্যতম হাতিয়ার। তবে আমাদেরকে অন্য প্রতিষ্ঠানের মালামালের ঝুঁকি বহন করে বেড়াতে হয়। বীমা আইন অনুযায়ী বীমা গ্রহীতার ঝুঁকিকৃত মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হলে আবরিত সম্পদের ক্ষতি প্রদান করতে বীমা কোম্পানী বাধ্য।
আমার শ্রদ্ধেয় এক স্যার বলেছিলেন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টসি পড়তে হলে দুইটা জিনিসের প্রয়োজন একটা হলো ক্যালকুলেটর এবং অপরটি হলো কাঠপেনসিল। পক্ষান্তরে আমরা যারা বীমা কর্মী এবং বীমা ব্যবসা আহরণ করি আমাদের মূল্যবান জিনিস হলো বীমা গ্রহীতা নিজেকে বিশ্বস্ততার সাথে উপস্থাপন করা এবং সর্বদা হাস্যউজ্বল মুখ ও ব্যবহার। বীমা কর্মী হিসেবে দেশের রাজধানী শহর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আমাদের বীমা ব্যবসা আহরণ করতে যেতে হয়। তবে ব্যাংকের মাধ্যমেই বেশীর ভাগ ব্যবসা বীমা আহরণ করা হয়ে থাকে।
আজ দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যেখানে কাস্টমস আমাদের কাগজ ছাড়া মালামাল ছাড় দেয়া হয় না। সেখানে আমরা কেন নিজেদেরকে ছোট করছি। সরকার যেখানে আইন করেছেন ব্যবসায়িগণ ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই বীমা পলিসি নিতে হবে, আমাদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যেখানে বিধি নিষেধ আরেপ করেছেন কোন অনৈতিক কমিশন থাকবে না সেখানে বীমা কর্মীগণ কেন অনৈতিক কমিশন দিয়ে অন্যের বীমা ব্যবসা ছিনিয়ে নিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে আপনি যেমন আয় করে আপনার সংসার, ছেলে-মেয়েদের, স্ত্রী পরিবার পরিজনের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন তেমনি যার ব্যবসা অনৈতিক কমিশন বা অনৈতিক লেনদের মাধ্যমে বীমা ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়েছেন তাঁর অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে। আপনি আঠারো হাজার মাকলুকাতের শ্রেষ্ঠ মানুষ জাতি কেন শুধু নিজের চিন্তা করছেন আপনার ভাইয়ের চিন্তা করছেন না।
পরিশেষে, আসুন সবাই স্বচ্ছতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সততা ও নৈতিক প্রজ্ঞার সাথে কাজ করে বীমা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখি। আমরাও বাঁচি। দেশ ও জাতির কল্যাণে একসাথে কাজ করি এবং সরকারের হাতকে শক্তিশালী করি। দূর করি দেশে শিক্ষিত বেকার সমস্যা। মনে রাখবেন দেশের গার্মেন্টেসের পর সবচেয়ে বেশী চাকুরীজীবি বীমা শিল্পে। সুতরাং এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখে জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে। লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম। একান্ত সচিব, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
