শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা, টাঙ্গাইল
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা। কিন্তু স্বাধীনতার এতো দিন পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জিয়াউর রহমান এবং জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। এই রকম জানলে আমি মুক্তিযুদ্ধ করতাম না। আমি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়লে যে বীরগুলো আছেন তারাও বীর হতে পারতেন না। আমি এমপি মন্ত্রী হওয়ার জন্য দল গঠণ করি নাই। বঙ্গবন্ধু আমাকে সাতবার মন্ত্রী বানাইতে চাইছে। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি, শেখ হাসিনা আমার বোন। তার সাথে রাজনৈতিক তর্কাতর্কি করতে পারি। কিন্তু ওনার মানসম্মান হানি হোক, আমি তা করতে পারি না।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের হামিদপুর গণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাদের অনেকেই এখনও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্ত হননি। আমি ক্ষমতায় থাকলে ওই অলস মুক্তিযোদ্ধাদের কমপক্ষে ৬ মাস সাজা দিতাম। কাদের সিদ্দিকী জনসভায় আরও বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- পাকিস্তানই ভালো ছিলো। আমি ওই ভদ্রলোককে বলতে চাই- তাহলে বাংলাদেশে কেন, পাকিস্তানে গিয়ে রাজনীতি করুন। বিএনপির আরেক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সেদিন বলেছেন- হঠাৎ বাংলাদেশ হয়ে গেছে। হঠাৎ বাংলাদেশ হয়ে গেছে! দেশকে স্বাধীন করতে কত মানুষ জীবন দিয়েছেন, কত মানুষের রক্ত ঢালতে হয়েছে, মা-বোন ইজ্জত দিয়েছে। এরকম কথা কি সহ্য করা যায়? এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আর বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য বিএনপির হাতে ক্ষমতা দেওয়া যাবে না।
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমার বোন (শেখ হাসিনা) দেশ ভালো চালাইতে পারছে না। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী মহিলা, স্পিকার মহিলা, সংসদের নেতা, উপনেতা মহিলা। কিন্তু মহিলাদের কোনো সম্মানের কোনো নিরাপত্ত্বা নাই, আমিতো এমন বাংলাদেশ চাইনি। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মেয়ে (শেখ হাসিনা যদি বজ্রকে (কাদের সিদ্দিকী) ভাই মনে করতে পারে। তবে আব্দুল আলী সিদ্দিকীর ছেলে কি শেখ হাসিনাকে বোন মনে করতে পারে না?
তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, যৌবনে এমন কোন পুরুষ বা নারী নাই যে প্রেমে পড়েনি। আমি একমাত্র মানুষ, গর্ব করে বলতে পারি, আমার কোনো নারীর সাথে প্রেম হয়নি। ওই সময়ে লতিফ সিদ্দিকী যে ঝড় তুলেছিল আইয়ুব-মোনায়েমের বিরুদ্ধে। আমি বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে চিনেছিলাম, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করে দেশমাতৃকাকে ভালোবাসে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। অনেকে দেশ ছেড়ে গেলেও আমি মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা করতেই যুদ্ধ চালিয়ে গেছি। আমি তাই আজও বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি।
সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়ন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মাস্টারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতিক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, সদস্য শামীম আল মুনছুর আজাদ সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি আবদুল হালীম সরকার লাল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এটিএম আবু সালেক হিটলু, উপজেলা কৃষক শ্রমিক লীগের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবদুর সবুর, ইথার সিদ্দিকী, দুলাল হোসেন, আশিক জাহাঙ্গীর প্রমুখ।