মুরাদ আহম্মেদ,
আমরা সবাই আসলে চাই পরিপূর্ণতা। ঝড়ের হালকা দমকায় যেমন বিদ্যুৎ চলে যায়, আমরাও একটু এদিক সেদিক হলে দুমড়ে মুচড়ে যাই। এই বুঝি সব গেলো, এই একটা চিন্তায় আমরা যেন অস্থির হয়ে যাই। অথচ বাস্তবতা হলো, যা হবার তা হবেই। যে নদী আর সাগরে ঢেউ নেই তাতো ডোবার চেয়েও মন্দ। ঠিক তেমনি যে জীবনে প্রতিবন্ধকতা নেই তাতো একটি ফিকে কুলফির নামান্তর। ছেলে বেলায় আমি বসির, আমীন, বাহাউদ্দিন, রুবেল, তারেক, কাওসার, শাহীন, হাবিব, মাহবুব, মৃনাল, নিতাই, জগা, কাঞ্চন, অলক, লিটন, বাহাদুর, ইয়াছিনসহ আমরা কেমন ছিলাম। আজকের আমাদের অবস্থানের কথা সেদিন ভাবতেও পারিনি। অথচ প্রবহমান ধারায় জীবন এক একজনের তরী এক এক ঘাটে এনে ভীড়িয়ে দিয়েছে। কেউ রাজনীতীবীদ, কেউ ব্যাবসায়ি, কেউ সাংবাদিক, কেউ আইনজীবী, কেউ চাকুরিজীবী, কেউ দোকানদার, কেউ প্রবাসি, কেউ ডাক্তার তো কেউ প্রকৌশলী। আমাদের কারো জীবনই সহজ সরল ছিলো না। আজো চড়াই উতরাই আছে। আজো আমরা এক বন্ধু অন্যের মুখোমূখী হলে মনে হয় যেন জীবন ফিরে পেয়েছি। মনের কস্টে আমি এফবিতে কোন পোস্ট দিলে আজো সবার আগে নড়ে ওঠে বসির, ফোন করে বলবেই, ” কিরে কি হইছে”। এতো ব্যস্ততম জীবনে এই মনে রাখাকে অনেক বড় সম্পদ মনে হয়। এটা প্রমানীত সত্য যে শিশুকালের খেলার সাথীর চেয়ে বড় বন্ধু আর কেউ নেই। স্কুল জীবন থেকে প্রফেশনাল ফ্রেন্ডশীপ শুরু এবং তা চলে শেষ জীবন পর্যন্ত। এর চেয়ে বড় যাতনা আর হয় না। কেবলই টপকে যাবার চিন্তা থাকে এদের মধ্যে। বিষাক্ত সব বাস্তবতা। তবুও মেনে চলি, সারাদিন কাজের শেষে বুদ্ধির মারপ্যাচের সব বৈঠকের পর রাতে সোনালী হলের সামনে যখন প্রানের আড্ডায় মিলিত হই তখন মনে হয় আসলেই জীবনটা খুবই সুন্দর। আমার মনে হয় এই যে পরস্পরবিমুখী জীবন যাত্রা, এর সমন্বয়ই হলো বাস্তবতা। আমি খুব ভালো ভাবেই জানি যে হঠাত আমার মৃত্যু হলে আমার আসেপাশের লোকদের মধ্যে শুরু হবে হিসেব নিকেষ। কেউ আমার চেয়ার পারার লবিং শুরু করবে জানাযার আগেই, কেউ করবে ভোটের হিসাব, কেউ ফেলবে স্বস্থির শ্বাস, কিন্তু দূরে থাকা ছেলেবেলার বন্ধুরা ছাড়বে সংগী হারানোর নিঃশ্বাস। আমি এর সবগুলোকে মিলিয়েই জীবনের সন্ধান পাই। এটাই পাওয়া উচিত। একটি মৃত্যুতে বসির বাহাউদ্দিন আমিন তারেকরা নিশ্চুপ হয়ে যাবে, তো একই মৃত্যুতে অনেকেই কলকাঠি নাড়বে। অবাক বিষয়কি জানেন, সব জানার পরেও সবার সাথে হেসেখেলে চলতে হয়। আমি জীবনে কখনোই ছারপোকা মারতে চাইনা, ভীষন গন্ধ। আমার সাদা পাঞ্জাবির উপর মশা বসলে আমি তা না মেরে উটিয়ে দেই যাতে পাঞ্জাবিটায় দাগ না পড়ে। এখানে আমার কোন কৃতিত্ব নেই, এসব শিখেছি বড় মিয়াদের বই পড়ে। আজকের আমার এই লেখার মুল আবেদনই হলো বই পড়ুন, যতো পারুন বই পড়ুন। প্রতিটি বইতে লেখকের স্বপ্ন আছে, আছে কিছু সত্যি। আছে কল্পনা। কল্পনা ছাড়া কেউ একটি শব্দও লিখতে পারেনা। সত্যকে মেনে নেয়ার নামই হচ্ছে উপলব্ধি, উপলব্ধির সত্য প্রকাশ হলো বই। জীবনকে স্বাভাবিক করে ছন্দময় গতী দিতে পারে একমাত্র বই। একমাত্র বই ফিরিয়ে দেবে আপনার শৈশব, আপনাকে চেনাবে বাস্তবতা, আপনাকে গড়ে তুলবে সিদ্ধান্ত গ্রহনের উপযোগী করে।
লেখাটি ফেইজ বুক হতে সংগ্রহীত।
লেখকঃ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের বরিশালের ষ্টাফ রিপোটার।