
আমাদের দেশে প্রচলিত একটা কথা কেউ কোন কাজে গেলে বা কোন কিছুর দাম জিজ্ঞাসা করলে বা কোন অর্ডার কেরি করলে প্রায় সময় শুনতে হয় এটা উপরের অর্ডার, এটা বড় সাহবেকে জিজ্ঞাসা করুন ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রশ্ন হলো যিনি কাজটি করেন তিনি শুধুই অর্ডার পালন করেন। এটার পক্ষে বা বিপক্ষে কোন কথা উঠতে পারে সেটার জন্য কি ঐ মানুষটি প্রস্তুত হয়ে আসেন না।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমরা সবাই গোলাম। আমাদের কারোই কোন স্বপক্ষে বা বিপক্ষে জবাব দেয়ার মত ক্ষমতা নেই। এই গোলামী জিঞ্জীর থেকে কখন বের হতে পারবো এটা আমাদের অজানা।
আমরা জানতে চাই না বা জানার চেষ্টাও করি না। আমরা সবাই তৈরি জিনিস ভোগ করতে পছন্দ করি। আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি না, তবে অপরের উৎপাদিত জিনিসের সমালোচনা করতে পারি। এই সকল উপেক্ষা করে আমাদেরকে মানুষ হতে হবে। আমাদেরকে সামনের দিকে এগুতে হবে। আমাদেরকে সাতার কাটা জানতে হবে, যাতে পানিতে পরলে আমরা নিজেরাই সাতরিয়ে উপরে উঠতে পারি।
আমরা আর কত কাল গোলাম হয়ে জীবন যাপন করবো। এটা পরিহার করতে হবে। আমাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদেরকে উদ্যোক্তা হতে। আমাদের মন থেকে গোলামী জিঞ্জির পরিহার করতে হবে।
আমরা কি মানুষ! যদি নিজেকে মানুষ হিসাবে দাবী করি তবে মানুষের যে রুপ রেখা, মানুষের যে চরিত্র, মানুষের যে জ্ঞান-বুদ্ধি, যে ক্ষমতা তা প্রমান করতে হবে। কারণ আমাজনের জঙ্গলেও মানুষ বসবাস করেন। তারাও মানুষ। কিন্তু তাদের মধ্যে আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করতে হবে।
মানুষের ভুলের কারণে মহান আল্লাহ-তায়ালা বহু জাতিকে এবং বহু জনপদকে পৃথিবী থেকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাই ইতিহাসের ঘৃন্যতম আদ জাতি, সামুদ জাতি ও ফেরআউনকে ধ্বংস করেছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ নিজেকে খোদা দাবী করেছিল কেউ বা ওজনে কম দিয়েছিল আবার কেউ সমকামিতায় জড়িত ছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহ সীমা লঙ্গণকারী কখনো পছন্দ করেন না।
আজ আমরা কি করছি, আমরা কি দেখতে পাচ্ছি, এটা ভাববার বিষয়। আমাদেরকে ভাবতে হবে, আমাদেরকে আলকোরআনের ইতিহাস জানতে হবে, বুঝতে হবে, আমরা নিজেরা নিজেদেরকে যত বেশি বুদ্ধিমান মনে করছি তত বেশি পিছনে চলে যাচ্ছি।
কিয়ামতের পূর্ব লক্ষণ আমাদের সামনে এসে গিয়েছে। আমার প্রাণ প্রিয় মহা নবী (সঃ) বিদায়ী ভাষণে বলেছিলেন যে, কিয়ামতের আলামত হবে, দেশে দেশে সুউচ্চ অট্টালিকা হবে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ, মাদ্রাসাগুলো চাকচিক্য হবে। তাই আজ দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ থেকে উঠে আসা মানুষগুলো ধনী শ্রেণীতে পরিনত হবে। তারা সমাজের সমাজপতি হবে, মসজিদ মাদ্রাসার সভাপতি উপদেষ্টা হবে। তারা দেশ পরিচালনা করবে। ফলে দেশে দেশে অরাজনৈতিকতা দেখা দিবে, সমাজে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। কেউ কাউকে সম্মান করবে না।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন-এ বার বার বর্ণনা দিয়েছেন “তোমরা ওজনে কম দিবে না” কারণ কাল হাশরে এই ওজনের মিজান নিয়ে বিচার হবে এবং আল্লাহর সেই বিচারের থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।
নবী মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন- নবী মুহাম্মদ (সঃ) কাল হাশরের ময়দানে শেষ বিচারে যিনি প্রতারণা করেছেন সেই প্রতারকের সুপারিশ করবেন না। তাহলে চিন্তা করে দেখুন আজ দুনিয়াবি কোন কাজ বিপদে পরলে কারো না কারো সাহায্য নিয়ে থাকি। কিন্তু কিয়ামতে বাবা-মা, ভাই-বোন এমন কি নিজ স্ত্রী-সন্তান কেউ কারো উপকারে আসবে না। তাহলে আমরা কার সাহায্য নিবো।
দেখুন এই পার্থিক জীবনে কোর্টে বিচারের দ্বারস্থ হলে সরকারি পক্ষের এটার্নি নিয়োগ দিয়ে থাকেন সরকার। যিনি কোর্টে বিচারের সম্মুখীন তিনি ব্যক্তিগত উকিল নিয়োগ দিয়ে থাকেন যাতে বিচারের রায় তার পক্ষে আসে। কিন্তু কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য সুপারিশকারী মনোনিত আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ)-কে। আর আমাদের সেই নবী মুহাম্মদ (সঃ) যদি সুপারিশ না করেন তাহলে আমাদের কি হবে।
আমরা জানি আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় এবং আল্লাহর কোন শরীক নেই। আমাদের আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এবং তাঁর পরে কোন নবী বা রাসুল আসবেন না। আল-কোরআনের পূর্ববর্তী আল্লাহ প্রদত্ত যত কিতাব ছিল তাঁর সকল বর্ণনা আল-কোরআনের মধ্যেই রয়েছে। এবং আখেরী নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর হাদিস রয়েছে। তাহলে আজ মাওলানা, মৌলভী ও মুফতি সাহেবগণ কেন ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন। এটাতো আমরা যারা সাধারণ মানুষ আমাদের জন্য বিভ্রান্তিকর। আমরা কোথায় যাবো, কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। মাঝে মধ্যে আমরা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছি না। এ হেন কাজ থেকে আমরা বাচঁতে চাই, মহান আল্লাহর বিচার থেকে মুক্তি পেতে চাই।
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের সকল মুসলিমের উচিৎ আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর শেষ বিদায়ী ভাষণের দিক নির্দেশনা মেনে চলা। যেমনটি তিনি বলেছিলেন শেষ জমানায় অনেক নামধারী আলেম ওলামার আবির্ভাব হবে তারা নিজেদের মনগড়া কথা বলবে নিজেরা মনগড়া ফতোয়া দিবে তাদের থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহর কোরআন এবং নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর হাদিস সুন্নাহ মোতাবেক চলতে হবে।
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের একান্ত সচিব, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ