Monday, August 11, 2025
Homeদেশগ্রামপপকর্ন বিক্রির আয়েই চলছে অসুস্থ মফিজের সংসার

পপকর্ন বিক্রির আয়েই চলছে অসুস্থ মফিজের সংসার

জাহিদ দুলাল, লালমোহন (ভোলা ) প্রতিনিধি:

৪০ বছর বয়সী মো. মফিজ। বাঁশের সঙ্গে রশি পেঁছিয়ে পায়ে হেটে বিভিন্ন হাট-বাজারে পপকর্ন বিক্রি করেন তিনি। ওই পপকর্ন বিক্রির আয়েই চলছে তার সংসার। ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের করিমগঞ্জ এলাকার মাহমুদুল হক দালাল বাড়ির মৃত হজল হকের ছেলে মফিজ। 

তিনি জানান, আগে এলাকায় মানুষের বাড়িতে গিয়ে নারিকেল গাছ পরিস্কার করে সংসার চালাতাম। এক বছর আগে অসাবধানতাবশত গাছ থেকে পড়ে আমার মেরুদন্ডের হাঁড় ও বাম হাত ভেঙে যায়। পরে স্থানীয় মানুষজনের সহযোগিতায় চিকিৎসা করি। চিকিৎসায় হাঁড় ভালো হলেও তারপর থেকে আর কোনো ভারি কাজ করতে পারছি না। তাই সংসার ও পেটের তাগিদে এখন বিভিন্ন বাজারে গিয়ে পপকর্ন বিক্রি করি।

মফিজ জানান, লালমোহন বাজার থেকে ভুট্টা কিনে বাড়িতে নিয়ে ভেজে পপকর্ন প্যাকেটে ভরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করি। এই কাজে আমার স্ত্রী আমাকে সহায়তা করেন। ওই পপকর্ন নিয়ে প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে বিক্রি করি। বৃষ্টি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দিন বেচাকেনা কিছুটা কম হয়। বন্ধের দিনে ৫০ প্যাকেট পপকর্ন বিক্রি করতে পারি। যেদিন ভালো বেচাকেনা হয় সেদিন অন্তত একশত প্যাকেটের মতো বিক্রি করি। প্রতি প্যাকেট পপকর্ন ১০ টাকা করে বিক্রি করি। এই প্যাকেট প্রতি খরচ হয় ৬ টাকা। যার ফলে এক প্যাকেট বিক্রি করলে চার টাকার মতো লাভ হয়। এতে গড়ে প্রতিদিন তিনশত টাকার মতো লাভ হয়। যা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনাসহ সংসার চালাচ্ছি। আমার দুই ছেলে রয়েছে। অভাবের কারণে তাদের তেমন পড়াতে পাড়িনি। যার জন্য তারা ঢাকায় গিয়ে এখন কাজ শিখছে। কাজ শেখার কারণে তারা সংসার চালাতে আপাতত কোনো টাকা দিতে পারছে না।

মফিজ আরো জানান, শুনেছি গরিবের জন্য সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু আমি এ পর্যন্ত কোনো সুবিধা পাইনি। আমার ঘরের ভিটা ছাড়া অন্য কোনো জমি বা সম্পত্তি নেই। আমি অসুস্থ্য, অসুস্থতার কারণে অনেক সময় শরীর যেন হাল ছেড়ে দেয়। তবুও পেটের তাগিদে এই অসুস্থ্য শরীর নিয়েই বিভিন্ন এলাকায় হেঁটে হেঁটে পপকর্ন বিক্রি করি। সরকারিভাবে বা সমাজের বিত্তবান মানুষ যদি আমাকে সহযোগিতা করে তাহলে আমার বাড়ির সামনে একটি মুদি দোকান করতে পারতাম। তাতে পরিশ্রমও অনেক কম হবে। আর ওই দোকানের আয় দিয়েই এখনকার চেয়ে আরেকটু সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারবো।

এ বিষয়ে ধলীগৌরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমান হাওলাদার বলেন, আমি এই ইউপি থেকে সদ্য চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। তবে মফিজকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এই মুহূর্তে ইউনিয়ন পরিষদে তেমন কোনো বরাদ্দ নেই। তবে সামনে ইউনিয়ন পরিষদে কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে মফিজকে তা প্রদানের চেষ্টা করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য