শাহীন কামাল
উচ্চমাধ্যমিকের পূর্বনির্ধারিত ও পূর্বর্জিত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে আজ। পরিক্ষার্থীদের সকলেই পাশ করেছে। পাশের হার শতভাগ। উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল দেয়ার দিনে এমন অনুভূতিহীন কোনদিনই ছিলাম না। শিক্ষকতার এই দেড় দশকের প্রতিটা ফলাফলের দিন আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় কেটেছে। সকাল থেকে ফোন রিসিভ করতে হতো একটার পর একটা। দেড়টা – দুইটার সময় আমার মতো গুরুত্বপূর্ণ লোক দেশে কয়জন ছিল৷ যেন আমাকে ফোনে পাওয়া অনেকের বিরাট অর্জন। আমাকে ফলাফল জানানো কিংবা আমা হতে সার্বিক ফলাফল জানতে পারাটা ভাগ্যের বিষয়। কোন বছর কলেজের ফলাফলে যারপরনাই খুশি হয়েছি, কখনো লজ্জায় পড়েছি। কলেজের ফলাফলের দিনে ভয়টা এ কারণে ছিল যে, পারসেন্টেজ খারাপ হলে নিশ্চিত আমার ব্যার্থতা। আমার বিষয়ে ফেল বেশি তো কলেজের ফলাফল খারাপ। সহকর্মী আর অধ্যক্ষ মহোদয়ের আড়চোখে চাহনিই বলে দিত, আমার অপরাধ কত বড়! কলেজের ভালো ফলাফলের দিনে যখন জেলায় কোথাও রেজাল্ট আসেনি তখনও বরিশাল বোর্ড থেকে ফলাফল জানিয়ে দিতেন উৎসাহী কেউ কেউ! উৎসবের আমেজ কলেজ জুড়ে। আমাদের মতো মফস্বলের এমন একটি কলেজের এ ধরনের ফলাফলে পুরো শহরের আলোচনায় থাকতাম আমরা। কিন্তু সেদিনও শতভাগ ছেলেমেয়ে পাশ করেনি। অথচ আজ শতভাগ পাশের দিনেও অনুভূতিহীন।
অনেক দেরি করেও ২০২০ সালের এইচএসসিপরীক্ষা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে অটোপাশের কোন বিকল্প ছিল না। পরীক্ষা হবে নাকি হবে না, ফলাফল কবে দিবে- এমন উৎকন্ঠায় দিন কেটেছে শিক্ষার্থীদের। বৈশ্বিক মহামারি স্থবির পুরো বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে হয়েছে আমাদের। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিবেশ না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, প্রয়োজন হয়েছে প্রচলিত আইন সংশোধনের। তাইতো সকল পরীক্ষার্থীই পাশ আর বিশাল সংখ্যক জিপিএ ৫।
এই পাশ আর জিপিএ ৫ নিয়ে ট্রল করা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ট্রল আমাদের যেমন মজা দেয় তেমনি ট্রলকারীদের মেধা দেখে বিস্মিত হই। কিন্তু এই ফলাফল নিয়ে ট্রল করা কোনভাবেই উচিত নয়। এই ফলাফলে আমাদের শিক্ষার্থী কিংবা কর্তপক্ষ কেউই দায়ী নয়। মহামারি করোনার কারণে নেয়া সিদ্ধান্তে কেন আমাদের সন্তানরা লজ্জিত হবে। এ তো তাদের দায় নয়। ২০২০ সালের এই এইচএসসি ব্যাচ থেকে একদিন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা হবে, রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবে। এদের নিয়ে ট্রল করে কেন তাদের হীনমন্যতার মধ্যে রাখব আমরা। অনেক জিপিএ ৫ থেকে ভর্তি পরীক্ষায় সত্যিকারের মেধাবীরা বেরিয়ে আসবে। তাইতো ভর্তি পরিক্ষা হতে হবে মানসই।উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করা সকলেই অভিনন্দন। সামনের দিনগুলোতে নিজেদের প্রমাণ করার যে সুযোগ তারা পেয়েছে তার মূল্য দিতে হবে তাদেরকেই।
লেখকঃ প্রভাষক, ইংরেজি, নাজিউর রহমান কলেজ, ভোলা।
৩০ জানুয়ারি ২০২১