Wednesday, June 25, 2025
Homeশীর্ষ সংবাদআশ্রাফউ‌দ্দিন বাবলু ভাই, একজন আড্ডাপ্রিয় মানুষের প্রয়ান,

আশ্রাফউ‌দ্দিন বাবলু ভাই, একজন আড্ডাপ্রিয় মানুষের প্রয়ান,

মোঃ সো‌য়েব মেজবাহউ‌দ্দিন,

সম্ভবত ১৯৯২ সাল হবে। সাপ্তাহিক ভোলাবানী এবং বরিশালের দৈনিক প্রবাসী পত্রিকায় লালমোহনের বিভিন্ন এলাকায় অনেকগুলো গভীর টিউভওয়েল দীর্ঘদিন যাবৎ অকেজো হয়ে পরে আছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে ঠিক করছে না, ফলে সাধারন মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছে, এই মর্মে একটা সংবাদ আমার নামে প্রকাশ হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। বিকালে বাজারে যাওয়ার সময় উত্তর বাজরের একটি হোমিও দোকান থেকে আমার নাম ধরে কেউ একজন ডাকল, আমি হোমিও দোকানে গেলাম, একটা সুন্দর হাসি দিয়ে আমি ডাঃ আশ্রাফউদ্দিন বাবলু, আপনিতো মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন তাই না? আমি বললাম, জি, একটা খালি চেয়ার দেখিয়ে বললেন, বসুন।  

লাল‌মোহ‌ন হো‌মিও চেম্বা‌রে. তা‌কিদ, মজনু, আ‌মি ও বাবলু ভাই

বাবলু ভাই বললেন, আমি সাপ্তাহিক ভোলাবানীতে আপনার গভীর টিউবওয়েল বিষয়ে লেখাটা চোখে পড়েছে। চমৎকার একটা সংবাদ লিখেছেন। লালমোহনের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা আমার পরিচিত, তিনি আপনার সংবাদটা আমার চেম্বারে এসে প‌ড়েছেন। তিনি খুব খুশি হয়েছেন। কারন বিভিণ্নস্থানে গভীর টিউবওয়েল অকেজো সেটা তিনিও জানেন। প্রকৌশল কর্মকর্তা জানান, সমস্যা হচ্ছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এখন আর সরকারীভাবে বরাদ্ধ আসেনা, ব্যবহারকারীকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কিনে গভীর টিউবওয়েল মেরামত করার প্রজ্ঞাপন জারী হয়েছে। বিভিন্নস্থানে অকেজা গভীর টিউবওয়েলগুলো একাধীক ব্যক্তির নামে বরাদ্ধ করা। তাই আমারা সংবাদ পেয়ে টিউবওয়েল মেরামত করার জন্য গিয়ে যন্ত্রাংশ কিনে আনতে বললে কেউ এগিয়ে আসেনা। যার ফলে অকেজো টিউবওয়েল আর মেরামত করা হয় না। অ‌কে‌জো হ‌য়ে প‌রে আ‌ছে।

কিছুক্ষন পর সেখানে আসলো জমজ দুই বন্ধু মজনু ও মান্নু। এর কিছুক্ষন পর বাবলু ভাইয়ের চেম্বারে আসলেন পৌর প্রকৌশলী কামাল ভাই। অনেকক্ষন জমিয়ে আড্ডা হল। লাল চা আর আরজু হোটেলে বিখ্যাত পেটিশ দিয়ে সবার ঘন্টাব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা। তারপর জোহরের আজানের সাথে সাথে আড্ডা শেষ হলো।

সেই থেকে বাবুল ভাইয়ের সাথে পরিচয়। পরবর্তীতে বিকালে আবার আমি বাবলু ভাইয়ের দোকানে, সাথে সাংবাদিক আনোয়ার চৌধুরী, মহিবুর রহমান আদনান, মোঃ মহসিন. জা‌হিদুল ইলাম দুলাল এবং সাথে মোঃ আজাদুর রহমান। বাবলু ভাইয়ের চেম্বার পরিনত হলো সাংবাদিকের মিলন মেলায়।সবাইকে তিনি আন্তারিকতার সাথে আপ্যায়ন করলেন। বাবলু ভাইয়ের সাংবা‌দিকতায় আগ্রহ দেখে আমি তাকে বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক শাহনামা পত্রিকার লালমোহন প্রতিনিধি করলাম। পরবর্তিতে তিনি সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকারও লালমোহন প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে আমরা গঠন করি লালমোহন সাংবাদিক ফোরাম। তিনি সভাপতি এবং আমি সাধারন সম্পাদেকর দায়িত্ব পালন করি। আমার সাংবাদিকতা জীবনে প্রতিদিন সকাল ও বিকাল বাবলু ভাইয়ের চেম্বার ছিল আড্ডাস্থল। লাল‌মোহন প্রেসক্লা‌বের প্রতিষ্ঠাতা সভাপ‌তি আব্দুর রাজ্জাক নানার সা‌থে আ‌লোচনা ক‌রে ১৯৯৯ সা‌লে লালমোহন প্রেসক্লাব গঠনের পর আমার না‌মে মামলা হয়, সেই মামলা পরিচালনার সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করেছিলেন বাবলু ভাই। বাবলু ভাইয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল ভিয়েনাপ্রবাসী সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান ভাইয়ের সাথে। মাহবুব ভাই আমাদের সাংবাদিকতার কাজে সহযোগিতা জন্য একটি ক্যামেরা ও মিনি টেপ রেকর্ডার উপহার দিয়েছিলে।

বাবলু ভাইয়ের সাথে আমাদের সাংবাদিকেদের একটা আত্নার সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। আমাদের সাংবাদিক ফোরামের সকল সদস্যকে তিনি সুন্দরভাবে গাইট করতেন। তার বড় ভাই ছিলেন বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক। বাবলু ভাই অনেক গরীব রোগীকে বিনা পয়সায় চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। আমি বর্তমানে ঢাকা চাকুরী করি কিন্তু প্রায় তার সাথে মোবাইলে কথা বলে হোমিও চিকিৎসা নিতাম। আর লালমোহন যাওয়ার পর প্রতিদিন আবার তার চেম্বারে চলতো আড্ডা। আমি আরজু হোটেলের পেটিশ কিনে তার চেম্বারে একত্রে যেতাম। আর বাবুল ভাই চায়ের ব্যবস্থা করতেন। তার সাথে বন্ধুত্বসুলভ আলোচনা চলত। কখন মজনু ও মান্নু, কখনও প্রকৌশলী কামাল ভাই প্রানবন্ত আড্ডা সকাল থেকে দুপুর আবার বিকাল থেকে রাত ৮টা কিংবা ৯টা বেজে যেতো।বাবলু ভাই অসুস্থ্য হয়ে যতবার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছেন ততবার আমাকে ফোন করে জানাতেন।বলতেন ভাই একুট সময় করে আসলে খুশী হব। আমি প্রতিবার মহিবুর রহমান আদনান ও আঃ হঃ মঃ ফয়সাল সহ বাবলু ভাইকে সমরিতা হাসপাতালে দেখতে গেছি।

ঢাকার সম‌রিতা হাসপাতা‌লে আঃ হঃ মঃ ফয়সল, ম‌হিবুর রহমান আদনান, আ‌মি ও বাবলু ভাই

আঃ হঃ মঃ ফয়সাল সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছে। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন। সবশেষে আমি, মহিবুর রহমান আদনান ও আঃ হঃ মঃ ফয়সাল গত জানুয়ারী মাসে সমরিতা হাসপাতালে বাবলু ভাইকে দেখতে যাই। তিনি আমাদের ৩ জনকে দেখে আনন্দে অসুস্থ্য শরীর নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলেন। তার তখনও স্যালাইন চলছিল। আমি তাকে শুয়ে থাকবে বললাম, কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। প্রায় ঘন্টাব্যাপি প্রথমে তার অসুখের বিষয় তারপর বিভিন্ন বিষয় নিযে প্রানবন্তা আলাপ। সেসময় তার স্ত্রী ও ছোট ছেলে পাশে ছিল। তার স্ত্রীর কথায় এবং বাবলূ ভাইয়ের সাথে আলাপ করে আমরা বুঝতে পারলাম নিয়তিম খাওয়া দাওয়া না করায় গ্যাস্টিক থেকে লিভারে আলচার হয়ে তা ক্যানসারে রুপ নিয়েছে। যা রিকভারী করা সহজ নয়। গতকাল ৬ জুলাই বিকাল ৩.৩০ মিনিটে দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর প্রিয় বাবলু ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন।এবং তার পরিবারকে এই শোক সইবার শক্তি দিন। আমিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য