Monday, June 23, 2025
Homeমন্তব্যআমরা সবাই ফেরিওয়ালা

আমরা সবাই ফেরিওয়ালা

মোঃ রফিকুল ইসলাম

প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে কেটে গেল ২০২০। নতুন করে সকলকে ভাবতে হবে ২০২১ নিয়ে। আমরা অনেকেই অনেকদিন ধরে বীমা জগতে আছি আবার নতুন প্রজন্ম আসবে। কারণ আমরা যখন এই শিল্পে থাকবো না তখন এর হাল নতুনকেই ধরতে হবে। তাই আমরা যারা পুরান তারা এই শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি উপহার রেখে আমাদেরকে ধীরে ধীরে বিদায় নিতে হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই বীমা শিল্পে কমিশনের মত একটা অনৈতিক ব্যধি ছিল। আজ আমাদের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশিকায় তা দূর হচ্ছে। আশা করি এই নির্দেশিকা বাস্তবায়নে সকল নন-লাইফ বীমা কোম্পানীসমূহ যদি এক বাক্যে এই মননে কাজটি এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে এই সেক্টরে অনৈতিক কার্যক্রম হবে না। এটা আমাদের সকলের দৃঢ় মনোবল নিয়ে মাঠে ময়দানে একই সাথে কাজ করে যেতে হবে।

আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কি ধরনের উপহার রেখে যাবো সেটা নির্ভর করবে আমাদের কর্মের উপর। আমরা যদি স্বচ্ছতার সাথে এই শিল্পে কাজ করে যেতে পারি তবেই তা সম্ভব। অন্যথায় আমাদের সকল চেষ্টা প্রচেষ্টা সবই ম্লান হয়ে যাবে। আসুন আমরা সবাই আমাদের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলি। আমাদের এ চলার পথ দীর্ঘ তবে চলতে পারলে খুবই মসৃন। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা কেন পারবো না। অবশ্যই পারবো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়, পথে ঘাটে, মাঠে ময়দানে, হাটে বাজারে, শহরে গ্রামে সর্বত্রই আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি। আমরা একে অপরের পরিপুরক। একে অপরের আত্মীয়, একে অপরের কুটুম। একটু পরখ করে দেখুন। কেন আমরা রেসারেসি করে যাচ্ছি, কেন আমরা অনৈতিক কাজ করে সমাজকে তথা শিল্পকে নষ্ট করেছি।

আমরা ফেরিওয়ালা। ফেরি করাই আমাদের কাজ। গ্রাম্য হকার ফেরি করতে হরেক রকম জিনিস মাথায় টুকরি নিয়ে যেমন ফেরিওয়ালাগণ গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বেরাচ্ছেন। আমরাও আমাদের স্ব-স্ব-কোম্পানীর প্রডাক্ট নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও বীমা গ্রাহকদের সাথে কথা বলি কিন্তু মনে রাখতে হবে সব নন-লাইফ বীমা কোম্পানীর প্রডাক্টের মূল্য সমান। যেখানে আমাদের নির্দিষ্ট ট্যারিফ রয়েছে সেখানে আমাদের প্রডাক্টের বেচা-কেনায় কোন অমিল থাকার কথা নয়। তদুপরি আমরা কেন মিথ্যার আশ্রয় নেব। স্বচ্ছতার সাথে এই শিল্পে অনেক কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। যা সঠিকভাবে করা হলে আমাদের কাজের কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এক সময় মরহুম এম. সাইফুর রহমান, এফসিএ মাননীয় অর্থমন্ত্রী (সাবেক) তিনি বলেছিলেন দর্জিগিরি দিয়ে দেশ চলে না অথচ আজ সেই দর্জির আয় দিয়েই দেশ চালাচ্ছে। দেশের ৮৩% আয় সেই গার্মেন্টস শিল্প থেকেই অর্জিত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ লোক জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। দেশের ব্যাকারত্ব দূর হচ্ছে।

এই শিল্পের থেকেই বীমা শিল্পের বহুলাংশে বীমা প্রিমিয়াম আয় হচ্ছে। আমরা একই দেশের বাসিন্দা একই মন্ত্রনালয়ের আন্ডারে এবং আমাদের একই নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সেখানে ভিন্নতা হয় কি করে, সেখানে একজনের ব্যবসা অন্যজনে কিভাবে হরণ করে। নিশ্চয়ই এটা অনৈতিক। জেনে শুনে কেন অনৈতিক কাজটি করে শিল্পের দুর্নাম ছরাচ্ছেন। আগেই বলেছি বাংলাদেশ সরকার বীমা শিল্পের জন্য অনেকগুলো ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছেন। আমাদের কোন কোন বীমা কৃষি মাঠ পর্যন্ত পলিসি দিয়ে সেবা করে যাচ্ছেন। সুতরাং সঠিকভাবে কাজ করলে কাজের সুযোগ রয়েছেন। জেনে শুনে আমরা একে অপরের ব্যবসা কেন ছিনতাই করবো।

আমাদের এই পেশায় পুঁজির দরকার হয় না। পুঁজি হলো ভাষা, ব্যবহার, স্বচ্ছতা, সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা। পার্টি এবং ব্যাংকারদেরকে সঠিকভাবে বুঝাতে হবে, সঠিক সময় সেবা প্রদান করতে হবে এবং সততার সাথে সংশ্লিষ্ট শর্তারোপ লিপিবদ্ধ করে ঝুঁকির আবরণ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে এমনও অনেক বীমাগ্রাহক রয়েছেন তারা কমিশন  কি বা কোন কাট-সাট আছে কি নাই তারা যাচাই করেন না বা বুঝেনও না। তারা চায় সেবা এবং সঠিক সময় কাভারনোট ও পলিসি পৌঁছে দেয়া। আবার অনেকেই আছেন লেবুর মত চিবাইতে চিবাইতে সকল রস নিয়ে শুধু বাকলটি ধরিয়ে দিতে চাহেন।

মনে রাখতে হবে রহস্যময় দুনিয়ায় রহস্যগেরা মানুষের অভান নেই, এটাকে মেনে নিয়েই ব্যবসা আহরণ করতে হবে। বীমা ব্যবসা হলো রাজকীয়। এই ব্যবসায় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কাজ করেন। যেমনটি করে গিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আজও রাজনৈতিক কর্মীরা এই শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। বর্তমান সরকার এই শিল্পকে ঢেলে সাজিয়েছেন। দিনে দিনে এই শিল্পের অগ্রসরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভিন্ন খাত-ওয়ারী বীমার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করছে। ইতিমধ্যে অনেক বীমা কোম্পানী গরু মোটা তাজাকরণ ফার্ম, মুরগী পালন ফার্ম, মৎস খামার, শস্য বীমা এমনকি কৃষি পণ্যের উপরও বীমা পলিসি দিয়ে যাচ্ছেন। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনৈতিক, কাড়াকাড়ি এবং আন্ডাকাট পরিহার করে সঠিকতার সাথে মাথা উচুঁ করে ব্যবসা আহরণ করুন। নিজে বাচুন অন্যকে বাচার সুযোগ দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য