আজ শনিবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর কাওলাপ্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। চিরচেনা তীব্র যানজট এড়িয়ে চলাচলে একাংশের পথ খুলছে আজ। শনিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে ফার্মগেট অংশ। এ ধাপে সাড়ে ১১ কিলোমিটার দূরত্বের পথটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকালে কাওলাপ্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। সেখান থেকে তিনি গাড়িতে এক্সপ্রেসওয়ে উঠবেন। টোল পরিশোধ করে যাবেন আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে। সেখানেও উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে তিনি বক্তব্য দেবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মূল এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার এবং র্যাম্পে ৪০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলতে পারবে। কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত মাত্র ১২ মিনিটে পৌঁছতে পারবেন নগরবাসী। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, এই অংশ চালু হওয়ায় বাঁচবে যাতায়াতের সময়, কমবে দুর্ভোগ।তারা জানান, আগামী জুনে দ্বিতীয় ধাপে মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত বাকি অংশ চালুর কথা রয়েছে। তখন এক্সপ্রেসওয়ের পুরোপুরি সুবিধা পাবেন নগরবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, উদ্বোধনের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও এতে সবাই চলাচল করতে পারবে না। পথচারী, মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি এতে উঠতে পারবে না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। তবে চলাচল করতে পারবে চার চাকার গাড়ি।এক্সপ্রেসওয়েতে দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার বলেন, দ্রুতগতিতে ও নিরাপদে যাতে গাড়ি চলাচল করতে পারে, সেজন্য দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।
এজন্য ওইসব গাড়িকে টোল গুনতে হবে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও হালকা ট্রাককে ৮০, বাস ও মিনিবাস ১৬০, মাঝারি ট্রাক ৩২০ এবং ভারী ট্রাক বা ট্রেইলরে ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কারণে টোলের টাকা থেকে নির্মাণ ব্যয় তোলা হবে।
বর্তমানে মূল এক্সপ্রেসওয়ে ৬০ কিলোমিটার গতিতে বিরতিহীনভাবে গাড়ি চলবে। মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেলে ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের সুযোগ দেওয়া হলে দ্রুতগতিতে অন্যান্য গাড়ি চলতে পারবে না। মিশ্র গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটবে। ওই আশঙ্কা থেকে দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে উন্মুক্ত করা হচ্ছে, সেখানে ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে এয়ারপোর্টে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরনিতে দুটি ও ফার্মগেটে একটি। এই ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে মহাখালী ও বনানী অংশে দুটি র্যাম্প বন্ধ থাকবে। বাকি ১৩টি র্যাম্প দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি প্রবেশ ও বের হতে পারবে। তবে যেসব স্থানে গাড়ি নামবে, সেসব পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েটের শিক্ষক গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুল নেওয়াজ বলেন, ওইসব পয়েন্টের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। নইলে যানজট নিরসনের লক্ষ্য পূরণ হবে না। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের আশা, প্রথম ধাপের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার গাড়ি চলাচল করতে পারবে। যদিও ওই সংখ্যক গাড়ি এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
একনজরে প্রকল্প : জানা যায়, পিপিপি পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কাওলা, কুড়িল, বানানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে কতুবপুর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। মূল এলিভেটেড অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। মূল এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য ৩১টি র্যাম্প থাকছে। এসব র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।
পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট এড়িয়ে সহজেই নগরবাসী ঢাকার বাইরে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫.৯৬ শতাংশ। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ৪১২.৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে।