একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ থাকে এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে আদর্শ নিয়ে নানারকম দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। সংসদে প্রধান বিরোধী দল কার্যকর নয়। বিএনপি সংসদে থেকেও নেই। তাদের হাতে গোনা যে ২-৪ জন সদস্য আছে তারা খুব একটা গ্রহণযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে না বলেই সাধারণ মানুষেরা মনে করে। বিএনপি অন্যান্য ইস্যুতেও সংসদের বাইরে যেয়ে সোচ্চার থাকবে, কথা বলবে এমন অবস্থা পরিলক্ষিত হয় না। বরং বিএনপি এখন ব্যস্ত তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর জন্য, দলের বিভিন্ন সংকট সমাধানের জন্য। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, তারেক জিয়ার দেশে ফেরা ইত্যাদি ইস্যুতেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। ফলে বিরোধী দল শূন্য আওয়ামী লীগ টানা ১৩ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের জন্য যে সুযোগটি তৈরি হয়েছিল সেটি উল্টো বুমেরাং হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রধান শত্রু হিসেবে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগই। সারাদেশে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে কোথাও না কোথাও আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরোধ দেখা দিচ্ছে, এক পক্ষ অন্য পক্ষকে আঘাত করছে, সন্ত্রাস-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। ইউপি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ২৫ জন মারা গিয়েছেন এবং এর সবগুলোই ঘটেছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার করে বলা হয়েছে যে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নেয়া হবে। কিন্তু কেউ যেন এ ধরনের হুশিয়ারিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। বরং আরো জোরেশোরে বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রার্থী হচ্ছেন। আর এই প্রার্থিতার জেরে এখন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। শুধু যে নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা তাও নয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বন্ধ হয়েছে। কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘাত-সহিংসতা চলছে। সারাদেশে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা যায় যে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ছাত্রলীগ বনাম যুবলীগ কোন্দল, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোন্দল, আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগ কোন্দলই যেন এখন রাজনীতির প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি স্থানে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সেই প্রতিপক্ষ এখন কেবল কথার যুদ্ধ নয়, এটি সহিংসতার পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে ৫ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে সেখানেও আওয়ামী লীগের অনৈক্য দেখা দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখন বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কি মোকাবেলা করবে, নিজেরাই যেন নিজেদেরকে মোকাবেলা করছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল শুধু নয়, কেন্দ্রের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে চরম মতবিরোধ। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছে, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দুর্নীতিবাজ বলছে। আওয়ামী লীগের নেতারাই স্বীকার করছেন, এটি একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতার দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং দ্রুত যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে সামনের দিনগুলোতে সংকট আরও দানা বাঁধবে। আওয়ামী লীগের একমাত্র আস্থাভাজন এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতার নাম হলো শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাড়া আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা যেন এখন কাউকেই মানতে চাচ্ছেন না। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি আছেন বলেই ভেতরে যে চরম কোন্দল এবং ক্ষমতার লড়াই সেটি দৃশ্যমান হচ্ছে না। তবে আগামী দিন গুলোতে যদি এটি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
সুত্র: বাংলা ইনসাইডার