ন্যাশনাল ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের ৩ মে ব্যাংকটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকটির জন্য বড় অঙ্কের ঋণ ও একক গ্রাহক ঋণসীমা নতুন করে নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া শীর্ষ ২০ ঋণগ্রহীতার ঋণ আদায়ের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়। এর ফলে ব্যাংকটি কিছুদিন ভালো ছিল। কয়েকটি বড় গ্রুপের চাপে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সেই নির্দেশনা তুলে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর আবার একই অবস্থায় ফিরে যায় ব্যাংকটি। এ কারণে বৃহস্পতিবার নতুন করে আবার বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্যাংকটির শীর্ষ ২০ গ্রাহকের মধ্যে অন্যতম হলো মায়শা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সাদ মুসা, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, এফএমসি ডকইয়ার্ড, প্রাণ-আরএফএল, ব্লুম সাকসেস ইন্টারন্যাশনাল, ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট। ব্লুম সাকসেস ইন্টারন্যাশনাল হলো একটি গ্রুপের বেনামি ঋণ। আর আগে এস আলম গ্রুপ ছিল শীর্ষ ঋণগ্রহীতা। এস আলম গ্রুপের সব সুদ মওকুফ করায় আসল টাকা ফেরত দিয়েছে গ্রুপটি।
জানা গেছে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ঋণ কার্যক্রম খুলে দেওয়ার পর ব্যাংকটি ফু-ওয়াং সিরামিক ও এসএস স্টিলকে ৮০০ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেয়। দুটি প্রতিষ্ঠানই এক ব্যক্তির মালিকানাধীন। এই প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট সালেহ স্টিলকে দেড় শ কোটি টাকা অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋণ প্রস্তাব আটকে দেয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যাংকটির একজন পরিচালকের সখ্য রয়েছে। এ কারণে অল্প সময়ে বড় অঙ্কের অর্থায়ন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ব্যাংকটিকে সতর্ক করে। ব্যাংকটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ডেকে সভা করে। এরপরও একই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় ঋণ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে ব্যাংকটির বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ বন্ধ করে দেয়। তবে এবার আগের মতো ঋণ বিতরণ একেবারেই বন্ধ করে দেয়নি, বরং কী কী খাতে ঋণ দিতে পারবে, তা সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে এসএমই খাতের ঋণ, কৃষি, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দেওয়া ঋণ, জমা থাকা স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ঋণ, শতভাগ নগদ জমা দিয়ে ঋণপত্র ও অন্যান্য পরোক্ষ ঋণ (নন-ফান্ডেড) সুবিধা। তবে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ অধিগ্রহণ করতে পারবে না ন্যাশনাল ব্যাংক। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনার মানেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এ জন্য আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।