Wednesday, July 2, 2025
Homeশিক্ষা সংবাদজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফিরছে শতভাগ আবাসিক রূপে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফিরছে শতভাগ আবাসিক রূপে

ঢাকার অদূরে সাভারে প্রায় ৭০০ একর জায়গা নিয়ে তৈরী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফিরছে শতভাগ আবাসিক রূপে। ক্যাম্পাসের উত্তরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, উত্তর-পূর্বে সাভার সেনানিবাস, দক্ষিণে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং পূর্বে সরকারি ডেইরি ফার্ম। দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাবি একটি স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে আসছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টি তার আবাসিক চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীর হলে সিট নেই। তবে কাগজে-কলমে জাবি এখনও আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় বহন করে আসছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নতুন ছয়টি হলসহ মোট ২৩টি স্থাপনা পর্যায়ক্রমে তৈরি করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে একসঙ্গে একনেক থেকে প্রথমবারের মতো এত বড় অঙ্কের অর্থ অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে লেকচার থিয়েটার ও পরীক্ষার হল। যেখানে একসঙ্গে আট হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। নির্মিত হবে স্পোর্টস কমপ্লেক্স, নতুন লাইব্রেরি ভবন, ছাত্রীদের জন্য খেলার মাঠসহ আরও অনেক কিছু। নৈসর্গিক পরিবেশ আর পরিযায়ী পাখির বিচরণস্থল হিসেবে পরিচিত জাবি এবার সত্যিই শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে। এখানে ছয় হাজার আসনের ১০ তলাবিশিষ্ট ছয়টি অত্যাধুনিক আবাসিক হলের নির্মাণকাজ একযোগে এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে তিনটি হল মেয়েদের ও তিনটি ছেলেদের। হলের নির্মাণকাজ সম্পন্নের পর ক্যাম্পাসের প্রত্যেক শিক্ষার্থীই নিজ নামে সিট পাবেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ আহ্‌সানউল্লাহ্‌ মজুমদারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম জাবির জীববৈচিত্র্যসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও পাখির ফ্লাইং জোন অক্ষুণ্ণ রেখে একটি সংশোধিত প্ল্যান ও সম্ভাব্যতা নিরীক্ষা করে। ক্যাম্পাসের কোন অংশে কী ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হবে- এর জন্য স্থপতি মাজহারুল ইসলামের মূল মাস্টারপ্ল্যানে গাইডলাইন ছিল। অতীতে বিভিন্ন সময় মূল মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ না করেই যততত্র ভবন তৈরি, কৃত্রিম জলাধারসহ অনেক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, বিদেশে পড়াশোনা করার সময় দেখেছি কত সুন্দর ক্লাসরুম ও লাইব্রেরি। কখনও উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক হবো- এমন আকাঙ্ক্ষা ছিল না। স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবো। তবে যখন হল ভিজিট করেছি তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর হলে আসব না। এমন পরিবেশে কীভাবে আমার ছাত্রছাত্রীরা বসবাস করছে, এটা হতে পারে না। গাদাগাদি করে তারা রয়েছে। তাদের জীবনমান ও বসবাসের জায়গার পরিবেশ অবশ্যই বদলাব। থাকার ভালো পরিবেশ না পেলে তাদের জীবনাচরণ ও লেখাপড়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, বিদেশে পড়াশোনা করার সময় দেখেছি কত সুন্দর ক্লাসরুম ও লাইব্রেরি। কখনও উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক হবো- এমন আকাঙ্ক্ষা ছিল না। স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবো। তবে যখন হল ভিজিট করেছি তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর হলে আসব না। এমন পরিবেশে কীভাবে আমার ছাত্রছাত্রীরা বসবাস করছে, এটা হতে পারে না। গাদাগাদি করে তারা রয়েছে। তাদের জীবনমান ও বসবাসের জায়গার পরিবেশ অবশ্যই বদলাব। থাকার ভালো পরিবেশ না পেলে তাদের জীবনাচরণ ও লেখাপড়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সকলের কাছ থেকে আশ্চর্যরকম সহযোগিতা পেয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, প্রথম নারী উপাচার্য যা চাইবে, তারা তা-ই দেবে। এরপরই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরি করে একটি মডেল শিক্ষায়তন হিসেবে জাবিকে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা হাতে নিই। জাহাঙ্গীরনগরের অধিকতর উন্নয়নে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা সর্বোচ্চ। এখন সময়ের বাস্তবতা ও প্রয়োজনের নিরিখে বুয়েটের চার শিক্ষকের সংশোধিত পরিকল্পনার আলোকেই তৈরি হচ্ছে নতুন নান্দনিক সব স্থাপনা। সংশোধিত পরিকল্পনায় স্থপতি মাজহারুল ইসলামের মূল মাস্টারপ্ল্যানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য আরও বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখেই আমরা একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এটা হবে পরিপূর্ণ একটি একাডেমিক সিটি। যেখানে গবেষণার সব ধরনের পরিবেশ থাকবে। স্বাভাবিকভাবে জাহাঙ্গীরনগরে যে কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা কঠিন। কারণ, মোট আয়তনের তিন ভাগের এক ভাগ পানি, এক ভাগ বনাঞ্চল, এক ভাগ উঁচু-নিচু ভূমি। নতুন স্থাপনা তৈরি করতে গেলে কিছু গাছ কাটা পড়লেও আমরা আবার নতুন গাছ লাগাচ্ছি। ফারজানা ইসলাম আরও বলেন, এমনও দেখেছি, টুলে বসে একজন শিক্ষক গবেষণা করছেন। তখন থেকেই পণ করেছি- শিক্ষক ও ছাত্রের লেখাপড়ার মান উন্নত করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মান উন্নয়ন করতে হবে। শুরুতে আমরা হল তৈরির দিকেই মনোযোগী হলাম। আবাসন সমস্যা নিরসনের বিষয়টিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। যদিও ছাত্ররা নানা ধরনের আন্দোলন করলেও আবাসন সংকট দূরা করা বা খাবারের মান বাড়ানোর বিষয়ে তাদের কিছু বলতে দেখিনি। তারা শিক্ষকদের রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করে ফেলে। তবে আমরা এমন ক্যাম্পাস গড়ে তুলব, যাতে বলা যায়- আমরাও পারি। আমাকে অপবাদ দেওয়াও হয়েছিল। তবে দেশবাসীর সহযোগিতা নিয়েই স্বপ্ন পূরণে অবিচল রয়েছি।তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগরের মূল মাস্টারপ্ল্যান আমরা পর্যালোচনা করেছি। আগে যত ভবন হয়েছে তার মধ্যে তিন-চারটি বাদে কোনো ভবনই মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ নয়। মূল মাস্টারপ্ল্যানকে স্পিরিট হিসেবে নিয়েই আমরা নতুন প্ল্যান করেছি। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মেডিকেল ফ্যাকাল্টি করা যেতে পারে। তবে সংশোধিত প্ল্যানে কী রয়েছে, সেটা না দেখেই কেউ কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। এটাই পীড়াদায়ক। প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পাসে ২০০ একরের মতো জলাধার। এর এক ইঞ্চি জায়গায়ও নতুন স্থাপনা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়নি। মূল মাস্টারপ্ল্যানে একাডেমিক, ডরমিটরিসহ তিনটি জোন রয়েছে। ছয়টি হল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের বাকি কাজ শিগগিরই শুরু হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য