Monday, May 12, 2025
Homeশিক্ষা সংবাদএসাইনমেন্ট নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়

এসাইনমেন্ট নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়

শাহীন কামাল

বিশ্বের সকল দেশের মতো করোনা ভাইরাস আমাদের সকল ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের দেশ অর্থনৈতিক কার্যাবলী সচল রেখে জনজীবনে স্বস্তি আনয়নের চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞমহল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চলছেন। ইউরোপে সাম্প্রতিককালের করোনার নতুন করে আস্ফালন অভিজ্ঞজনদের ভাবিয়ে তুলেছে। গত ১৮ মার্চ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যকর আপাতত দৃষ্টিতে অচল হয়ে পরেছে। সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও সুযোগের অপ্রতুলতার কারনে মফস্বলের শিক্ষার্থী আশানুরূপ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত ক্লাসরুম ভিত্তিক শিখন কার্যক্রম থেকে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মনোনিবেশ করানো দুরূহ হয়ে যাচ্ছে।

অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আর সিদ্ধান্ত এলেও শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য এসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। ১ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী মোট ১৮ টি এসাইনমেন্ট লিখে জমা দিবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভিভাবক কিংবা তার প্রতিনিধি স্কুল থেকে এসাইনমেন্ট নিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে লিখিয়ে স্কুলে জমা দিবে।

পড়াশোনা বিষয়ে আমাদের অভিভাবকগণ প্রয়োজনোতিরিক্ত সচেতন সব সময়। মাঝেমধ্যে এই সচেতনতা স্বাভাবিকতাকে হার মানিয়ে নির্যাতন পর্যায়ে চলে যায়। কোচিং কিংবা গৃহশিক্ষক নির্ভর এহেন শিক্ষার্থী তথা তাদের অভিভাবকগন এসাইনমেন্ট নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন। কম্পিউটারের দোকান থেকে শুরু করে বইএর দোকানে অভিভাবকদের উপচে পড়া ভীড়। কোন গাইডবুক থেকে ভাল উত্তর তৈরি করা যাবে তা নিয়ে পারস্পরিক যোগাযোগের অন্ত নেই। কেউ কেউ আবার পূর্ব গৃহ শিক্ষক কিংবা কোচিং এর দ্বারস্থ হচ্ছেন যদিও কর্তৃপক্ষ স্পষ্টত জানিয়ে দিয়েছে এই এসাইনমেন্টের মাধ্যমে ফলাফল বিষয়ে কোন প্রভাব বিস্তার করবে না। এ শুধু শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে তাদের শিখন কার্যক্রমে আটকে রাখা।

এসাইনমেন্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই। দীর্ঘদিন ক্লাসে হাজির হতে না পেরে তাদের মধ্যে একধরনের শূন্যতা বিরাজ করছিল। পত্রিকায় ছবি বেরিয়েছে দীর্ঘবিরতির পরে স্কুল গ্রাউন্ডে প্রিয় সহপাঠীকে পেয়ে কি আবেগে জড়িয়ে ধরেছে! টেবিলে দীর্ঘ অনুপস্থিত থাকার পরে পরম আগ্রহে এসাইনমেন্ট শুরু করেছে অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাবার বিষয়ে নিষেধ স্বত্তেও কোন কোন স্কুল শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনার আগ্রহ দেখাচ্ছে।

আমরা সত্যিকারেই একটা চরম অসময় পার করছি। বর্তমান করোনা মহামারীতে কেউ ঝুঁকি মুক্ত না হলেও আমাদের বৃদ্ধ আর শিশুদের নিয়ে ভাবনা বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সত্য উপলব্ধি করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। উচ্চমাধ্যমিক বিষয়ে বেশ সময় নিয়ে শেষে কিনা পরিক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। এ নিয়ে নানা তর্কবিতর্ক হতে পারে কিন্তু সত্য হচ্ছে সংশ্লিষ্টমহল ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বেশ কয়েকমাস অপেক্ষা করেও কোন পথ না পেয়ে এহেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিতে অন্য বিকল্প না থাকায় ভর্তি পরীক্ষা হবে সত্য কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সচেতন সংশ্লিষ্টমহল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে ভাবছে৷ এই সকল স্তরে এইভাবে চিন্তা করলে স্কুলগুলোর কোমলমতি শিশুদের এসাইনমেন্ট নিয়ে বাড়তি উদ্বেগ অমূলক।

এসাইনমেন্ট নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা৷ ময়মনসিংহে মেয়ের এসাইনমেন্টের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মায়ের শাড়ি বিক্রির সংবাদ সকলের মতো আমাকেও আহত করেছে। সরকার যেখানে স্পষ্ট বলে দিয়েছে এক্ষেত্রে কোন ফি দেয়া নেয়ার সুযোগ নেই, সেখানে এ ধরনের ঘটনা অপরাধ। এ সকল অনাহুত ও অপ্রত্যাশিত অপরাধ বন্ধে অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি।

 এই এসাইনমেন্ট পরবর্তী শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হওয়ায় কোন ভুমিকা রাখবে না। রোল নম্বর এগুতে পিছাতে এর অংশগ্রহণ নেই। আমার সন্তানের নিজে নিজে শিখার অগ্রগতি পর্যালোচনা করার এই সুযোগকে কেন হাতছাড়া করব! উপযুক্ত আর প্রত্যাশিত ফলাফল তথা শিক্ষা দিতে গিয়ে ফার্মের মুরগীর মতো টিউটর নির্ভর শিক্ষার্থীদের নিজ দায়িত্ব এই কাজটি করতে দেই না আমরা! দেখি, সে কতটুকু নিজ দায়িত্বে পেরে উঠে। সে যদি ব্যার্থ হয় ( যদিও এখানে ব্যর্থতার কোন সুযোগ নেই) তবে পরবর্তীতে না হয় শুধরে নিব।

লেখকঃ শিক্ষক, সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য