আসছে প্রণোদনা প্যাকেজে ১৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ‘মূলধন ঋণ’

বাংলাদেশ ব্যাংক

আগামী তিন বছর প্রণোদনা প্যাকেজ কর্মসূচির আওতায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ‘মূলধন ঋণ’ নিয়ে আসছে ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংক বার্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস খাতে বিশেষ মূলধনী ঋণ সহায়তার এই প্রণোদনা প্যাকেজ কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ঋণ সহায়তা দেয়া হবে ৪ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস খাতে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ‘মূলধন ঋণ’ নিয়ে আসছে ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। আগামী বছরে ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি এবং ২০২২ সালে ৬ হাজার ১০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংকের এ উদ্যোগকে প্রশংসা করলেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের হাতে এর সুবিধা পৌঁছবে কিনা এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা আছে। এজন্য ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ নীতি আরও সহজ, গতানুগতিকের বাইরে ব্যাংকগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ঋণ প্রাপ্য তালিকায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মিডিয়াকে বলেন, তিন বছরের ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ভালো। কিন্তু এর আগে দরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন। গতানুগতিক ধারায় এসব প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা কেমন, দক্ষতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা কেমন এসবের ওপর নির্ভর করবে এ ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়নের সফলতা। এজন্য গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। তাহলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব। সূত্র মতে, বিশেষ এই প্যাকেজের আওতায় দেয়া ঋণের সুদের হার অন্য যে কোনো ঋণের চেয়ে কম হবে। এই কর্মসূচির আওতায় সোনালী ব্যাংক আগামী তিন বছর (২০২০-২০২২) ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ কর্মসূচি সহায়তা দেবে। এছাড়া জনতা ব্যাংক দেবে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক ২৯৪ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ঋণ বিতরণ করবে ৫০ কোটি টাকা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিশেনের (বিকেএমইএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ সহায়তার ফান্ড তিন ভাগের এক ভাগ নির্দিষ্ট করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বরাদ্দ এবং বাকি দুই ভাগ বড় শিল্প ও সার্ভিস খাতে বিতরণ করলে অর্থনীতিতে এর সুফল পাওয়া যাবে। কারণ বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় যে ঋণ দেয়া হচ্ছে নীতিগত কিছু সমস্যার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে এটি পৌঁছাচ্ছে না। নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতেও। বিশেষ করে শিল্প খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। কাঁচামালের অভাবে উৎপাদনে শ্লথগতি নেমে আসে। সার্ভিস খাতও প্রায় হুমকির মধ্যে পড়ে। এরই প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতির গতি সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস খাতের মূলধনী ঋণ হিসেবে ঋণ প্যাকেজ দেয়া হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি অনেক বায়ার পণ্য কেনার অর্ডার দিয়েছে। আমদানিও স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কার আগাম খবরে অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের অর্ডার আবারও স্থগিত করছেন। ব্যবসায় আবারও স্থবিরতা নেমে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের এই প্যাকেজ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এদিকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগে আছে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীদের মতে, সম্প্রতি পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যে চুক্তি সম্পাদন করা হয় সেখানে সোনালী ব্যাংক উল্লেখ করেছে, করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্র শিল্প ও সার্ভিস খাতের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪শ’ কোটি টাকার মূলধনী ঋণ সহায়তা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে ১৮শ’ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ দেয়া হবে। একইভাবে জনতা ব্যাংক চলতি অর্থবছরে ১৩শ’ কোটি টাকা, আগামী অর্থবছরে ১৪শ’ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫শ’ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে। পাশাপাশি অগ্রণী ব্যাংক তাদের চুক্তির প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, চলতি বছরে ৯শ’ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেবে। তবে পরবর্তী দুই বছরের ঋণ, বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা চুক্তিপত্রে উল্লেখ করেনি। আর রূপালী ব্যাংক চলতি অর্থবছরে এক হাজার কোটি টাকা, আগামী অর্থবছরে ১১শ’ কোটি টাকা এবং পরবর্তী অর্থবছরে ১২শ’ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। একইভাবে বেসিক ব্যাংক ২০২০-২২ অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে ১২০, ১৪০ ও ১৬০ কোটি টাকা এবং বিডিবিএল পর্যায়ক্রমে ৪০, ৪৫ ও ৫০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।  অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বড়, মাঝারি, ছোট পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের স্বাভাবিক জায়গায় ফিরে যেতে আরও সময় লাগবে। কারণ এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। সারাবিশ্বের অর্থনীতিই করোনাভাইরাসের প্রভাবে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। আমরাও এর বাইরে নই। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তবে দ্রুততার সঙ্গে এটা কাটানোর জন্য ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here