তিন যুগ পর বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পুনরুদ্ধার করল আলবিসেলেস্তারা। ফিরে পেল হারানো সিংহাসন। স্বপ্নের সোনার ট্রফি এখন শুধুই আর্জেন্টিনার। রোববার রাতে দেশটির রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তায় ঢল নামে লাখ লাখ মানুষের। যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। বাঁধভাঙা উল্লাস-আনন্দ। এ উচ্ছ্বাস আকাশি-নীলদের। তারাই এখন ফুটবলের রাজা।
কাতার থেকে বুয়েন্স আয়ার্সের দূরত্ব ১৩ হাজার ৮০৯ কিলোমিটার। দূরত্বটা বাধা হয়নি আর্জেন্টাইনদের কাছে। লুসাইলে মেসিদের গগনবিদারী চিৎকার পৌঁছে যায় আকাশে-বাতাসে। মুহূর্তেই বুয়েন্স আয়ার্স হয়ে ওঠে উৎসবের নগরী। জনসমুদ্রে পরিণত হয় পথঘাট। সড়ক, বাসাবাড়ির ছাদ এমনকি ট্রাফিক লাইটের লোহার কাঠামোর ওপর উঠেও নেচে-গেয়ে আনন্দ উদযাপন করেছে জনতা। সবার কণ্ঠে ছিল-‘চ্যাম্পিয়ন, উই আর চ্যাম্পিয়ন’ ‘মেসি মেসি মেসি…।’
প্রায় দুই লাখ মানুষ বুয়েন্স আয়ার্সের ওবেলিস্ক স্তম্ভ এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন। সবার গায়ে ছিল আকাশি-নীল জার্সি, মাথায় টুপি আর হাতে প্রিয় পতাকা। আতশবাজির ঝলকানি, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে তাদের সে কী উচ্ছ্বাস। ৫০ বছর বয়সি হোটেল অভ্যর্থনাকর্মী জুলিও বেরদুন বলেন, আজ আমাদের দিন, আনন্দটাও আমাদের। জোয়েল সিয়ারালো নামের ২৩ বছর বয়সি এক তরুণ আনন্দে আত্মহারা হয়ে বারবার বলছিলেন, আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না-আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি।
আরেক আর্জেন্টাইন বলেন, আমি আমার আবেগ ধরে রাখতে পারছি না। মেসিদের এমন জয়ে আমি খুবই গর্বিত। একজন মেসি আমাদের দেশের এত বড় অর্জনের কাণ্ডারি। ৩৬ বছর পর এমন আনন্দ উদযাপনের মুহূর্ত পেয়ে আমরা খুবই খুশি। আরেকজন বলেন, এমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে, তা আমি ম্যাচ শেষের আগে পর্যন্ত কল্পনাও করতে পারিনি।
রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে ওবেলিস্ক চত্বরে আলো জ্বালানো হয়। শুধু স্কয়ারের কেন্দ্রস্থলেই নয়, আশপাশের রাস্তার আনাচেকানাচে যত দূর চোখ যাচ্ছিল, শুধু মানুষ আর মানুষ। বুয়েন্স আয়ার্সে লা মোস্কা ব্যান্ডের পক্ষ থেকে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে আর্জেন্টিনা দলের অফিসিয়াল গানের সংস্করণটি পরিবেশন করা হয়।
সোলেদাদ পালাসিয়োস বলেন, ৩৫ বছরের জীবনে এ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। বিশ্বকাপ উপভোগ করব বলে জীবনভর অপেক্ষা করছি।
মেসি ও ডি মারিয়ার জন্মশহর রোজারিওতে প্রতিদ্বন্দ্বী দল নেওয়েলস ওল্ড বয়েজ ও রোজারিও সেন্ট্রালের ভক্তরা বিভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলা দেখেছেন। ২১ বছর বয়সি তরুণ নাহুয়েল কান্তেরো বলেন, জাতীয় এ দল সবাইকে একত্র করেছে। আপনারা দেখেছেন সেন্ট্রাল এবং নেওয়েলসের সমর্থকেরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন, গান গাইছেন। এটি এখানকার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।