বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একমাত্র মেডিসিন, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম সালেহ উদ্দীনকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে বদলি করায় সেবা শঙ্কায় পড়েছে বরিশালবাসী। তিনি দীর্ঘ দিন বরিশাল বিভাগের মধ্যে একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনটি পরিচালনা করে আসছেন। তাই তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজেই পদোন্নতী দিয়ে বহাল রাখার দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। তা না হলে প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের এনজিওগ্রাম মেশিনটি কোন কাজে আসবে না বলে দাবী তাদের।
জানা যায়, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগের ২০১৩ সালের দিকে প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি এনজিওগ্রাম মেশিন সরবরাহ করা হয়। মেশিনটি পরিচালনার জন্য এই বিভাগে কোন চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন মেশিনটি কোন রোগীর উপকারে আসেনি। অতঃপর ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম সালেহ উদ্দীনকে বরিশালে পদায়ন করা হলে তিনি বক্সবন্দি এনজিওগ্রাম মেশিনটির কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই থেকে তিনি রোগীদের করনারি এনজিও প্লাস্টি (হার্টে রিং) বাসানো শুরু করেন। সেই থেকেই নিয়োমতভাবে রোগীদের করনারি এনজিও প্লাস্টি (হার্টে রিং) বসানোর কার্যক্রম এই হাসপাতালেই সম্ভব হয়। যা বরিশালের ইতিহাসে প্রথম।
ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম সালেহ উদ্দীন করনারি এনজিও প্লাস্টি (হার্টে রিং) বসানোর পাশাপাশি রোগীর হৃৎপিণ্ডে (হার্টে) ডুয়েল চেম্বার পেসমেকার প্রতিস্থাপনও করতেন এবং কিডনীতে রিং সংযোজন করেন। তবে ২০২১ সালের দিকে মেশিনটি সামান্য নষ্ট হওয়ায় রোগীদের অসুবিধায় পড়তে হয়।
পরবর্তীতে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলামের সহযোগীতায় মেশিনটি আবারো চালু করতে সক্ষম হন ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম সালেহ উদ্দীন। দীর্ঘদিন বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে হাজার হাজার গরীব রোগীদের পাশে দাড়ানো ডা. এম সালেহ উদ্দীনকে পটুয়াখালীতে বদলী করার হতাশা প্রকাশ করেন এ অঞ্চলের রোগীরা।
ডা. এম সালেহ উদ্দীন বরিশালে একজন চিকিৎসক যিনি হৃদ রোগে আক্রান্ত রোগীদের মেডিসিনের মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি করনারি এনজিও প্লাস্টি (হার্টে রিং) ও ডুয়েল চেম্বার পেসমেকার প্রতিস্থাপন ও কিডনীতে রিং বসাতেন। গত ২৬ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সারমিন সুলতানা স্বাক্ষরিত এক আদেশে ডা. এম সালেহ উদ্দীনকে সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে পদায়ন করা হয়।
তাকে পদোন্নতি দিয়ে বরিশাল মেডিকেল কলেজেই পদায়ন করার দাবী এখানকার অনান্য বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গোলাম মোস্তফা জানান, ডা. এম সালেহ উদ্দীন স্যার এখানে আসার পর আমাদের এনজিওগ্রাম মেশিনটি চালু হয়েছে। এখানে নিয়োমিত ভাবে করনারি এনজিও প্লাস্টি (হার্টে রিং) ও ডুয়েল চেম্বার পেসমেকার প্রতিস্থাপনও হচ্ছে। কিন্তু এমন অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসককে এখান থেকে বদলী করায় এই মেশিনটি বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় এর কুফল ভোগ করতে হবে রোগীদের। তাই ডা. এম সালেহ উদ্দীন স্যারকে পদোন্নতি দিয়ে এখানেই রাখার দাবী জানাই।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, কার্ডিওলোজী বিভাগে চিকিৎসক এমনেই কম। তার উপর ডা. এম সালেহ উদ্দীন’র মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে বদলী করায় আমাদের এখানে চিকিৎসক সংকট তৈরি হবে। তাছাড়া তিনি এখানে নিয়োমিত এনজিও প্লাস্টি (হার্টে রিং) ও ডুয়েল চেম্বার পেসমেকার প্রতিস্থাপন করতেন। তিনি চলে গেলে এই সেবাটি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তাকে পদোন্নতি দিয়ে এখানেই রাখার জন্য মন্ত্রনায়লের কাছে দাবী জানিয়েছি।