Monday, June 23, 2025
Homeদেশগ্রামসাংবা‌দিক‌দের মান‌বিকতা

সাংবা‌দিক‌দের মান‌বিকতা

বিপ্লবী সংবাদ রি‌পোর্ট

ভোলার লালমোহনে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সংগ্রহের জন্য দুপুরে সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম দুলাল, সালাম সেন্টু ও হাসান পিন্টুসহ গজারিয়া থেকে ফেরার পথে গজারিয়া বাজারের আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে দাঁড়াই। এর মধ্যেই এক মহিলা কোলে ছোট্ট একটা দেড় বছরের শিশু নিয়ে এসে অনেকটা অসহায়ত্বের সহিত তাহাদের বলেন ভাই আমারে নিয়ে একটু তাড়াতাড়ি হসপিটাল যাবেন। ছেলেটা পানিতে পড়েছে। তারা তখন মটরসাইকেল স্ট্রাট করে লালমোহনের দিকে রওয়ানা দিবো। ওই মহিলার চেহারার অসহায়ত্ব আর কোলের শিশুটার দিকে নজর পড়ে তাদের। দেখে খুব খারাপ লাগে।

হোন্ডা চালাচ্ছেন সাংবাদিক দুলাল, মাঝে পিন্টু আর পিছনে সেন্টু। কিছু না ভেবেই পিন্টু, সেন্টুকে বলল নামেন, তিনিও পিন্টুর কথা শুনে নেমে গেলেন, পরে দুলালকে তারা বলল আপনি মহিলা আর শিশুটিকে নিয়ে হসপিটালের দিকে যান। আমরা আসতে পারবোই। সাংবাদিক দুলাল কথা শুনে কিছু না ভেবে মহিলা আর শিশুকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশে মটরসাইকেল চালানো শুরু করেছেন। তাদের জন্য আগ থেকেই গজারিয়ায় অপেক্ষারত সাংবাদিক মনজুর রহমান ও মাসুম বিল্লাহ। এখন অবস্থা এমন হয়ে গেছে মটরসাইকেল একটা আর মানুষ চারজন। তাতে এক মটরসাইকেলে চারজন লালমোহন আসা কোনোভাবেই সম্ভব না। এরমধ্যে মনজু বললো আপনারা আমার হোন্ডা নিয়ে চলে যান, আমি গাড়িতে করে আসবো। যেই কথা সেই কাজ; হোন্ডার চাবী নিয়ে পিন্টু নিজেই হসপিটালের উদ্দেশে হোন্ডা চালানো শুরু করেছি। পথের মধ্যে ওই মহিলাসহ শিশুকে নিয়ে রওয়ানা দেয়া দুলাল এর সাথে দেখা, তাকে বলল আপনি একটু তাড়াতাড়ি করে আসেন আমরা হসপিটাল গিয়ে অপেক্ষা করি।

হাসপাতালের পৌছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই দুলাল ও পানিতে পড়া গুরুতর অসুস্থ শিশুসহ মহিলাকে নিয়ে পৌছেছেন হসপিটালে। দ্রুত ইমার্জেন্সির ডাক্তারকে ডেকে শিশুটিকে দেখাল তারা । এরপর ডাক্তার বললেন শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। হসপিটাল ভর্তি করতে হবে। তারাও বলল ভর্তি করেন। ডাক্তার ভর্তি দিলেন। এ ফাঁকে শিশুকে নিয়ে হোন্ডায় করে আসা মহিলা বললেন আপনাদের ভাড়া কত! পিন্টু হেসে দিয়ে বলল আসলে আমরা হোন্ডা ভাড়ায় চালাই না, আমরা সবাই সাংবাদিক। এটা শুনে মহিলা বললেন ভাই আসলে আমি বুঝতে পারিনি। তারাও কিছু মনে করেনি তাঁর কথায়। পরে জানতে পারি ওই মহিলা নিজেও শিশুটির কিছু হন না। তিনি একজন প্রতিবেশি। শিশুর বাবা থাকেন চট্টগ্রামে আর শিশুর পানিতে পড়া দেখে তাকে উদ্ধারের পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন শিশুর মা। তার জন্য এই প্রতিবেশি মহিলা মুক্তা নিজেই শিশুটিকে নিয়ে ছুটেছেন কোনোভাবে জীবন বাঁচানোর চেষ্টায়। যাই হোক পরে শিশুকে নিয়ে হসপিটালের ওয়ার্ডে গেলে তাকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এরপর ডাক্তারের লেখা কিছু ওষুধ হসপিটালে সরবরাহ না থাকায় বাহিরের ফার্মেসি থেকে নিজ খরচে এনে দেন সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম দুলাল । শিশুটির সেবায় আন্তরিকতা দেখিয়েছেন নার্সরাও। পরে একটি সিটে শিশুটিকে রেখে তার মাকে আসার খবর পৌছে সাংবাদিকগণ চলে আসেন। ফেরার সময় দেখে মনে হয়েছে শিশুর সাথে আসা ওই প্রতিবেশি মহিলাও সাংবাদিকদের কর্মকাণ্ডে অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন। হয়েছেন চিন্তা মুক্ত। সাংবাদিকগণ নিশ্চিন্তে ত্যাগ করেছি হসপিটাল। আল্লাহ ভালো রাখুক শিশুটিকে এই কামনাই । বেঁচে থাকুক মানবিকতা। এই ঘটনায় লালমোহনে সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম দুলাল, সালাম সেন্টু ও হাসান পিন্টু সকলের প্রশংসায় ভাসছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য