মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন
১৯৯১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। তখন আমি ঢাকায় আমার ছোট খালার বাসায় ছিলাম। টেলিফোনে আম্মা জানায় যে আমি ২য় বিভাগে পাশ করি। ফলাফল জানার পর ঢাকা হতে লালমোহন চলে আসি। বাসায় আসার পর বাবা ও মাযের পা ছুয়ে সালাম করলাম। পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ১ম পত্র বিষয়ে পাশ করা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কারন লালমোহন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আক্রোষ এবং থানা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্মকর্তার পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ১ম পত্র বিষয়ের সময় যা করেছিল তা নয়তম পর্বে উল্লেখ করেছি। তারপরও আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২য় বিভাগে পাশ করেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

বিকালে বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধু সমীরের দোকান থেকে ১০ টা মিষ্টি নিয়ে থানা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্মকর্তার বাসায় যাই। থানা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্মকর্তা ছিলেন ব্যাচেলর। আমাকে দেখে বাসায় ভেতরে ডাকলেন। ড্রয়িং রুমে বসালেন, আমি মিষ্টির প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বললাম, স্যার আমি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে এইচএসসি পরীক্ষায় ২য় বিভাগে পাশ করেছি। থানা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন সাহেব মুচকি হেসে বললেন, অভিনন্দন, তোমার উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। পিয়নকে মিষ্টির প্যাকেটটা ভেতরে রাখতে বললেন। এবং আমাকে মিষ্টির সাথে আপেল কমলা এবং পরিশেষে চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। থানা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্মকর্তা বললেন, আমার উপর আর অভিমান করে থেকে না।যে কোন প্রয়োজনে আমার কাছে এসো। আমার দরজা তোমার জন্য উন্মুক্ত।পরবর্তীতে থানা সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্মকর্তার সাথে আমার একটা ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়। সন্ধার দিকে সংবাদ সংগ্রহের কাজে লালমোহন থানায় যাই। থানার ডিউটি অফিসারের সামনে আমার মায়ের চাচা লালমোহনের একসময়ের জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান বিশিষ্ট জননেতা আমার নানা এ. কে. এম. সিরাজুল ইসলাম (খোকন) এর সাথে দেখা। যিনি খোকন চেয়ারম্যান হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয় এক নেতা ছিলেন। তার এলাকার লোকজন কোন প্রকার বিপদে পড়লে তিনি তৎক্ষনাৎ ছুটে যেতেন তাদের সাহায্য করতে। একজন সৎ আদর্শবান ও ন্যায়পরায়ন নেতার সকল প্রকার যোগ্যতা তার মধ্যে ছিল। আজও থানায় এসেছেন একজকে সাহায্য করতে। আমাকে দেখলেই বিভিন্ন প্রকার রশিকতা করতেন। থানায় আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, এই শালা তুই থানায় কেন? তুই নাকি সাংবাদিক হয়েছিশ, আমি তোর চামরা দিয়ে পাটি শাফটা পিঠা বানাবো। থানার অফিসাররা কিছুটা চমকে গেলেন, আমি পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য বললাম, নানা, আমার চামরা দিয়ে পাটি শাফটা পিঠা বানালে তাতো নোনতা লাগবে, খেতে পারবেননা। খোকন নানা হেসে উঠলেন, ডিউটি অফিসারকে বললেন, এই শালা আমার নাতী। আপনারা ওকে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করলে খুশি হব।। ডিউটি অফিসার আমাকে একটা চেয়ার দিয়ে বসতে বললেন। চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। আমার জনপ্রিয় সেই নানা এ. কে. এম. সিরাজুল ইসলাম (খোকন) খুলানায় এক সড়ক দূর্ঘটনায় ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। আমি আল্লাহর কাছে খোকন নানার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।(চলবে)