মোঃ রফিকুল ইসলাম
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের তথা বাঙ্গালীর অহংকার, তাঁকে নিয়ে শুধু বাংলাদেশীরাই নয় পুরো বিশ্বই গর্ববোধ করে। কারণ বিশ্বে একমাত্র ব্যক্তিই যিনি ক্ষুদ্র ঋণ উদ্যোক্তা। ক্ষুদ্র ঋণের গবেষক, উদ্ভাবক, ক্ষুদ্র ঋণ দাতা। তাইতো বিশ্ববাসী তাকে শান্তিতে নোভেল দিয়ে ভূষিত করেছিলেন, সম্মানিত করেছেন। বাঙ্গালীর প্রবাদ রতনে রতন চিনে বলেই নোভেল প্রদানকারী কমিটি/বোর্ড শুধু ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকেই সম্মানিত করেননি, তিনি পুরো বিশ্ববাসীকে সম্মানিত করেছেন। মূল্যায়ন করেছেন। কারণ তাদের চিন্তা চেতনায় একজন যোগ্য ব্যক্তিকে সম্মান দিতে পেরেছেন।
রতনে রতন চিনে- বাংলা ভাষার পূরণো প্রবাদ। তুরস্ক রতন চিনেছে, কারণ তারা নিজেরা যেমন রতন ঠিক তেমনিভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকেও রতন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাইতো তুরস্কের সিভিল সার্ভিস তাদের দেশের পরীক্ষার্থীদের জন্য এমন প্রশ্ন করেছিলেন।
সম্প্রতি দৈনিক মানব জমিন পত্রিকা পাঠে অবগত হ’লাম। তুর্কি ভাষায় ছাপা হওয়া নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নটি ৫৮ নং প্রশ্নঃ নীচের কোন অর্থনীতিবিদ ক্ষুদ্রঋণ ধারনার উদ্ভাবক এবং ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী? এবং উত্তর বাছাইয়ের জন্য প্রশ্নটির নীচে তুর্কি ভাষায় ৫টি ‘অপশন’ ছিল, যেখানে ড. ইউনুসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ৫জন নোবেলজয়ীর নাম ছিলঃ
১।মোহাম্মদ ইউনুস, ২।মালালা ইউসুফজাই, ৩।মোহাম্মদ এল-বরাদেই
৪।কফি আনান, ৫।শিরিন এবাদি
প্রশ্নটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার কারণে অনেকেই সেটি পোস্ট করেছেন, শেয়ার করেছেন আমরা বাংলাদেশ গর্বিত গর্বিত বাঙ্গালী জাতি।
খেলাধুলার মাধ্যমে দেশ, জাতি সহজে পরিচিতি লাভ করে। তদ্রুপ ড. মুহাম্মদ ইউনুস দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য মুক্তির লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ ধারনার প্রবর্তক। সে কারণেই তিনি গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুস নিজের চিন্তা চেতনা ও কাজের অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক ক্রীড়া জগতের সর্বোচ্চ সম্মান “অলিম্পিক লরেল” সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ এমন একজন ব্যক্তি যিনি পুরো বিশ্ব ঘুরতে পারেন পাসপোর্ট ছাড়া। বিশ্বের যেকোন দেশে যেতে হলে তার পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না। বিশ্বের অনেক দেশের পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখার জন্য তাকে ডাকা হয়েছে এবং তিনি ঐ সকল দেশের জাতীয় পার্লামেন্টে ভাষন দিয়েছেন। দিয়েছেন ক্ষুদ্র ঋনের উপর দিকনির্দেশ। তার দিকনির্দেশে ঐ সকল দেশের মানুষ উপকৃত হয়েছে, উপকৃত হয়েছে ঐ সকল দেশ।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। তাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের মানুষ অনেক উপকৃত হতো।
সোনা চিনতে হলে স্বর্ণকারের কাছে যেতে হবে। কারণ সোনায় যদি লোহা মেশানো থাকে তাহলে চুম্বক লাগালেই সেটা টেনে নিয়ে আসবে। সোনায় লোহা মেশানো আছে কিনা তা চুম্বক ব্যবহার করে পরখ করা যায়। সত্যিকারের জ্ঞানী গুনিজনদেরকে চিনতে হলে জ্ঞান থাকতে হয়। আমরা জ্ঞানী গুনির সম্মান দিতে জানি না। তাই আমাদের দেশে জ্ঞানী গুনি মানুষের অভাব দেখা দিয়েছে।
আমি একদিন আমার বসকে বলেছিলাম স্যার আপনাদের মতো এরকম শিক্ষিত লোক চলে গেলে বা মৃত্যু হলে শিক্ষিত লোক আমদানী করতে হবে। কারণ দিন দিন শিক্ষার যে অবনতি হচ্ছে তাতেই প্রমান করে। আবার যতটুকু শিক্ষিত পাওয়া যায় তাও সম্মান করা হয় না, মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের দেশে সরকারী চাকুরী করতে হলে মিষ্টি খাওয়ার পয়সা দিতে হয় মেধাবী হয়েও যদি মিষ্টির পয়সা না দেয়া হয় তাহলে তার চাকুরী হয় না। তাইতো শিক্ষিত লোকের অভাবে শিক্ষিত মানুষ চেনা যায় না।
ড. শহীদুল্যা যথার্থই বলেছিলেন যে দেশে জ্ঞানী গুনীদের মূল্যায়ন করা হয় না দেশে জ্ঞানী গুনির জন্ম না নেয়াই উত্তম। জ্ঞানীদেরকে সম্মান করা হলে যিনি সম্মান করেন তিনিও একদিন সম্মানিত হবেন। তাই কাউকে অবজ্ঞা না করে তার কাজের মূল্যায়ন করা শিখুন।
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, লালমোহন, ভোলা।