মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন
আমার সাংবাদিকতার অস্থায়ী অফিসের ঠিকানা ছিল বাবুল ফার্মেসী ও পলাশ ষ্টুডিও।দুটি প্রতিষ্টানই আমার নানার মালিকানাধীণ ভাড়াটে। বাবুল ফার্মেসীর মালিক শ্রী বলহরি কর্মকার এবং পলাশ ষ্টুডিও মালিক শ্রী গনেশ বাবু। বাসায় কোন সংবাদ লেখা সম্ভব ছিলনা।তাই পলাশ ষ্টুডিও বসেই সংবাদ লেখা কাজটা করতাম।বলহরি বাবুর বাবুল ফার্মেসীতে গিয়ে বসলেই আন্তরিকতার সাথে জানতে চাইতো আমি চা খাবো কিনা? আমি ও না বলতামনা। তার আন্তরিকতাকে সম্মান করতাম। গনেশ বাবুর পলাশ ষ্টুডিওতে গেলে বলতেন আজ তুই একটা চা খাওয়া। তোর কাছে ”জীবনে এই প্রথম চা চাইলাম”। অথচ প্রতিদিন তিনি একই কথা বলেন। বলহরি বাবু এবং গনেশ বাবু দু’জনের সাথে আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আমি তাদের দাদা বলে ডাকতাম। তাদের সাথে ছিল খুব ঘনিষ্ঠতা। শ্রী বলহরি বাবু পরলোক গমন করেছেন। বাবুল ফার্মেসীর ব্যবসা তার ছেলে বাবুল পরিচালনা করছে। আর গনেশ বাবু তার পলাশ ষ্টুডিও বন্ধ করে গ্রামের বাড়ীতে পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
১৯৯০ সালের কোন একদিন একলোক ৪ জন লোক নিয়ে ষ্টুডিওতে পাসপোর্ট সাইজের ছবি তোলার জন্য নিয়ে আসেন। আমি ছবি তুলতে আসা লোকদের নামে রশিদ কাটার সময় জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম এরা কৃষি ব্যাংক থেকে কৃষিঋন নেয়ার জন্য গ্রাম থেকে এসেছে। আর যে লোকটি এদেরকে নিয়ে এসেছেন তিনি ব্যাংকের দালাল। কোন লোক ব্যাংকে ঋন নিতে আসলে ব্যাংকের কিছু কর্মচারী দালালকে দেখিয়ে দিয়ে তার সাথে আলাপ করতে বলে। এবং বলে দালাল সব কাগজপত্র তৈরী করে দিলে সহজে ঋন পাওয়া যাবে।
দালালকে জিজ্ঞাসা করলাম, কৃষি ব্যাংক থেকে ঋন নিতে কি করতে হবে? তার হিসাব থেকে জানলাম, একজন গরীব কৃষককে হাল চাষ করার একটি গরু কেনার জন্য কৃষি ব্যাংক হতে ৩,০০০(তিন) হাজার টাকা ঋন দেয়া হয়।আর কৃষককে এই ৩,০০০ টাকা ঋন নেওয়ার জন্য দালালকে ৫০০/- টাকা, ব্যাংকের তদন্ত কর্মকর্তাকে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ৫০০/- টাকা এবং ঋন অনুমোদনের জন্য ম্যানেজারকে ৫০০/- টাকা দিতে হয়। তার মানে একজন কৃষককে ৩,০০০ টাকা ঋন নিতে দালাল ও ব্যাংক বাবদ ১৫০০ টাকা এবং টিএডিএ বাবদ আরও ৩০০ টাকা খরচ হয়। তাহলে কৃষকের হাতে টাকা থাকে ১২০০ টাকা। পরবর্তীতে এই ৩০০০ টাকা সময় মত দিতে না পারলে সেই টাকা সুদে আসলে ১০-১৫ হাজার টাকা হয়ে যায়। এক সময় এই ঋনের টাকা পরিশোধ করার জন্য মামলার ভয়ে কৃষককে তার চাষের গরু বিক্রি করতে হয়।
এ বিষয়টি নিয়ে আমি বরিশালের দৈনিক প্রবাসী পত্রিকায় সংবাদ পাঠাই। এবং সংবাদটি খুব গুরুত্ব সহকারে পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল। সংভাদটি প্রকাশের পর লালমোহন কৃষি ব্যাংকে বরিশাল হতে অডিট টিম আসেন। এবং দালালের কাজ সাময়ীকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
ষ্টুডিওতে এসে বিষয়টি গনেশ বাবুকে অশ্রুশিক্তভাবে দালাল জানায় যে, এক সাংবাদিক তার পেটে লাথি মেরেছে। ব্যাংকে দালালি করে তার জীবিকা চলত।এখন তার জীবিকা বন্ধ। —চলবে