
মোঃ রফিকুল ইসলাম
আমার নেট আইডি’র এক বন্ধুর ভাষ্য: “সুখের সাথে টাকার কোন সম্পর্ক নেই, টাকা শুধু চাহিদা মেটায়। সব সুখ যদি টাকা দিয়ে পাওয়া যেতো তাহলে ভালোবাসাটা দোকানে বিক্রি হতো” কথাটি পড়ে আমার কাছে খটকা লেগে গেলা। আমি চিন্তা করছি এটা কেমন যেনো হয়ে গেল না? কারণ ভালোবাসা কেন দোকানে বিক্রয় হবে। ভালোবসাতো হৃদয়ে ধারণ করবো। ভালো কেন দোকানে বিক্রয় হবে? ভালোবাসা কি চোখে দেখা যায়? যে দোকানে বিক্রয় হবে। ভালোবাসা হলো মনের ব্যাপার, যা অন্তর থেকে আসে। হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। আবার কবির ভাষায় বা কোন কোন লেখকের ভাষায়, স্বর্গী থেকে ভালোবাসা আসে আবার স্বর্গে চলে যায়। যা-হউক চিন্তা করছি, আজকের ট্রফিক হবে “ভালোবাসা”। চেষ্টা করছি আমি একজন নগন্য মানুষ ভালোবাসার উপর কিছু লিখবো। আবার চিন্তা করছি ভালোবাসার কথা নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের উপন্যাস, কাব্য, গল্প, গান, ছড়া, আরও কত কিছু লিখে ফেলেছেন। তাই লিখবো কি লিখব না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগতেছি। তারপরও হাতে কলম ধরলাম। কিছু একটা লিখবোই ইনশাআল্লা। যা-হউক আমার স্বর্ধীনি আমাকে সাহস যুগিয়ে ছিলেন, তিনি আমাকে বলেছিলেন এক একজনের মনের ভাব এক এক রকম, এক একজানের চিন্তা চেতনা এক এক রকম। তাই বলে কি তুমি লিখবে না। তোমার মনের ভাব তুমি প্রকাশ করো। তার কথার উপর ভরসা শক্তি পেয়েই আজকের লিখা।
ভালোবাসা স্বর্গীয়, যদি ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে এই পৃথিবীতে মানুষ হতো না, মানুষ থাকতো না, কোন প্রাণীই জন্ম নিতো না, এক কথায় পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছুই ভালোবাসার উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে। তাইতো ভালোবাসা না থাকলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না। কথাটি সত্য, প্রেম, ভালোবাসা করে গেছেন “লাইলি-মজনু”, শির-ফরহাদ। তাদের ভালোবাসার মধ্যে কোন খাদ ছিল না। কোন জড়তা ছিল না। প্রেম ভালোবাসা হয়েছিল আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ) এবং আল্লাহর সাথে। প্রেম ভালোবসা ছিল আমাদের নবী রাসুলগণের মধ্যে, প্রেম ভালোবাসা মা-বাবার সাথে, সন্তানের সাথে এই ভালোবাসাই একান্ত এবং হৃদয়ের ভালোবাসা।
আজকাল আমাদের ছেলে-মেয়েরা যে ভালোবাসা করে সেটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত এবং আবেগ তারিত ভালোবাসা। জোয়ার-বাটার ন্যায়, আসে আবার জোয়ার-বাটার মতো চলে যায়। এই সকল ভালোবাসার মধ্যে গভীরতা নেই, টেকসই নেই, হৃদয় নেই। শুধু আবেগের ভালোবাসা, প্রয়োজনের ভালোবাসা। প্রযোজন ফুরিয়ে গেলে ভালোবাসাও থাকে না।
কেউ কেউ বলে থাকেন ভালোবাসা অন্ধ, ভালোবাসা দেখেনা কোন পথ, দেখে না কোন ধর্মকর্ম। দেখেনা কোন বাঁধা-বিপত্তি। দেখে না কোন জাত-গোষ্ঠী।
ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ হলো যাকে ভালোবাসবো তাকে নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকার অঙ্গিকার। ভালোবাসার কোন মাফকাঠি নেই। ভালোবাসার ঋণ শুধু ভালোবাসা দিয়েই শোধ করতে হয়। ভালোবাসার ষ্টেটাস লিখে শেষ করা যাবে না।
ভদ্র লোক লিখেছেন ভালোবাসা আর টাকা এক নয়। তিনি আরো লিখেছেন ভালোবাসা আর সুখ শান্তি এক নয়। ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা। তার এই উক্তির সাথে আমি এক হতে পারিনি। কারণ টাকা আর ভালোবাসা একে অপরের পরিপুরক, একে অপরের অপরিহার্য। টাকা না থাকলে ভালোবাসা মূল্যহীন।
ভালোবাসা হলো মায়ের সাথে সন্তানের ভালোবাসা, বাপের সাথে সন্তানের ভালোবাসা যার মধ্যে কোন খাদ নেই। তবে সন্তান বড় হলে ভালোবাসায় পরিবর্তন ঘটে। ভালোবাসা রূপ বদলায়। ঋতুর মতো ভালোবাসাও রুপ বদলায়। যেমন ধরুন যে মা তাঁর সন্তানকে পরম স্নেহ, ভালোবাসা, আদর-যত্ন দিয়ে তীলে তীলে সন্তান বড় করিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে বড় করেছেন। সন্তান এখন বড় চাকুরী করেন। ভালো বেতন ভাতা পাচ্ছেন। গাড়ী, বাড়ীর মালিক হয়েছেন, উচ্চ স্তরে মর্যদার অধিকারী হয়েছেন। দুঃখের বিষয় হলো বাবা-মাকে টাকা কড়ি দিচ্ছেন না। মা বাবা পড়ের বাড়িতে কাজ করে জীবন যাপন করে যাচ্ছেন। বাবা ময়ের কোন খোঁজ খবর নেয়ার সময় সন্তানের থাকে না। অথবা খোঁজ খবর নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না।
সেদিন মা কি টাকা পয়সার লোভ-লালসায় পড়ে সন্তানকে আদর যত্ন করে বড় করেছিলেন? নিশ্চয় না, তাহলে সন্তানের কাছে সেই মায়ের ভালোবাসা রূপ বদলিয়েছে। মা-বাবা এখন ছেলের থেকে টাকা চায়। এই টাকাই হলো প্রয়োজন। আর এই টাকা না থাকলে ভালোবাসাও থাকে না।
টাকার বিকল্প টাকা। ভালোবাসার বিকল্প ভালোবাসা নয়, ভালোবাসার বিকল্প টাকা। আমরা জেনেছি বা শুনেছি ভালোবাসা জাত, ধর্ম, ধনী, দরিদ্র মানে না বা দেখে না বা বিচার বিশ্লেষণ করে না আবেগ তারিত হয়ে বা আবেগের বশিভুত হয়ে একে অপরকে ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এটা কিছুদিন পর যখন অভাব, অনটন, সামাজিক অর্থ-কষ্টে পরে যায়, তখনই ভালোবাসার মধ্যে বিপত্তি ঘটে, এমনও দেখা যায় একজন অন্যজনকে ছেড়ে চলে যায়। থাকে না মিল মহব্বত, থাকে না ভালোবাসা। এমনও দেখা যায় একে অপরের শত্রু, একে অপরকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। অভাবের তারনায় মা সন্তানকে বিক্রী করতে বাধ্য হচ্ছে। অতএব টাকার বিকল্প শুধুই টাকা। টাকা ছাড়া পৃথিবী অচল, টাকা ছাড়া পৃথিবী অন্ধ। টাকার কাছে ভালোবাসা বিক্রি হচ্ছে অহরহ। এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন কিছু চিন্তা করলে আল্লাহর পর টাকা চিন্তা করতে হবে। আমরা যাদেরকে বিধর্মী বলে অবজ্ঞা করে থাকি আজ সেখানে যাওয়ার জন্য পাগল প্রায়। সেখানে গিয়ে অনেক টাকা রোজগার করবো। অনেক টাকা আয় করবো, স্ত্রী, পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে পারবো।
মাঝে মাঝে এমনও দেখা যাচ্ছে মানুষের ভালোবাসা আত্মার সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কেও ছাড়িয়ে যায়। ভালোবাসা হলো কাউকে বুঝতে পারা যদি ঐ ভালোবাসার মানুষটিকে বুঝতে না পারেন তখননি বিপত্তি ঘটে। তবে ভালোবাসা কোন অপরাধ নয়, শুধু বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আর এই ভালোবাসার মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি হলে ভালোবাসার মানুষটিও দূরে ঠেলে দেয়। প্রবাদে আছে মনের অমিল হলে ভালোবাসা বেড়া বেঙ্গে অনত্র চলে যায়।
ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই, নিজের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান ভাই-বোন রয়েছে। তাদেরকে বুঝতে পারলে তাদের সাথেই ভালোবাসা করা যায়। আবেগ তারিত হয়ে ধনীর দুলালীর সাথে ভালোবাসা করে লাভ কি? টাকা নেই ভালোবাসা অচল। বরং আবেগের ভালোবাসাকে এক ধরনের রোগ বলা যায়। ঐ ভালোবাসার মধ্যে কারণে অকারণে বিপত্তি ঘটে, সেই ভালোবসা শুধুই কাঁদায়, কিছু দিতে পারে না।
টাকা না থাকলে বিয়ে করা বউর সাথে চলে কলহ। কারণ বউর চাহিদা মতো বাজার করতে না পারলে পদে পদে কষ্ট পেতে হয়। সন্তানের চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলেও কথায় কথায় বিপত্তি ঘটে। মা-বাবাকে ঠিকমত টাকা দিতে না পারলে ভালোবাসা থাকে না। ছোট বেলার খোকাকে দূরে ঠেলে দিতে দ্বিধাবোধ করে। না।
কথায় আছে টাকা থাকলে বাঘের চোখও পাওয়া যায়। টাকা থাকলে আশি বছরের মানুষ হজ্জ করে জন্ম নেয়া শিশুর মতো মাসুম হওয়া যায়। একদিন বাহলুল পাগল রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বলেছিলেন কে আছেন বেহেস্ত কিনবেন? সেদিন বেহেস্তের দাম হাকানো হয়েছিল দুই লক্ষ টাকা। অতএব টাকার বিকল্প শুধুই টাকা। ভালোবাসা নয়। টাকা টাকা ভালোবাসা মূল্যহীন। অর্থহীন।
পরিশেষ, বলবো টাকার বিকল্প টাকা। ভালোবাসার বিকল্পও টাকা। টাকা ছাড়া কোন কিছুই কল্পনা করা যায় না। অতএব শুধু টাকা আর টাকাই মানুষের জীবনের মুখ্য। টাকা ছাড়া স্ত্রী, সন্তান, মা বাবা আত্মীয়-স্জন কোন কিছুই কাছে থাকে না। টাকা ছাড়া পৃথিবী অচল।
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, পিএস টু সি.ই.ও এন্ড চেয়ারপারসন, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।