
মোঃ রফিকুল ইসলাম
আমরা প্রত্যেকে নতুন বছরের আগমনের দিন গুনছি। ২০২১ সাল আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে আবার অনেক কিছু দিয়ে গিয়েছে। তারপরও ২০২১ সালকে সানন্দে বিদায় জানিয়ে পদার্পণ করবো ২০২২ সালে। পৃথিবীময় সকল জাতিকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার অপেক্ষায়। পুরো বিশ্ব অপেক্ষমান রাত ১২.০১ মিনিটে নানামুখি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন বছর ২০২২ সালকে স্বাগত শুভেচ্ছা জানাবে।
২০২২ সাল যেন করোনা মুক্ত হয় সেই প্রত্যাশা নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে আকুল আবেদন জানাই। একই সাথে ২০২১ সালের সকল দুঃখ-দুর্দশা ভুলে নতুন বছরকে নতুনভাবে সাজানোর জন্য সকলের প্রতি উদাত্ব আহ্বান জানাচ্ছি।
নতুন বছর ২০২২ সালের আগমনের খুশিতে সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ভালোবাসা। একে অপরের প্রতি সকল বিদ্বেষ ভুলে একসাথে পথ চলার আহবান জানাচ্ছি।
আমাদের মনে পরে সেই সব মানুষের স্মৃতি যারা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি তাঁদের স্মৃতি বুকে নিয়ে আজ সামনের দিকে এগিয়ে চলি।
আমাদের মনে রাখতে হবে যার শুরু আছে তার শেষও আছে। আমরা যেহেতু জন্ম নিয়েছি তাই আমাদের মৃত্যুও রয়েছে। সুতরাং কেউ আগে বা কেউ পরে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতার ভাষায় বলেছেন- যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। তবুও ২০২১ সালে ভালো-মন্দ মিলিয়ে একসাথে বসবাস করেছিলাম কিন্তু আজ আমরা অনেককেই হারিয়েছি তবুও যারা বেঁচে আছে তাঁদের হারাতে চাই না।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গানে গানে বলেছিলেন-ফোঁটে যে ফুল আঁধার রাতে, ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে, আমায় তারা ডাকে সাথে- আয় রে আয়। সজল করুণ নয়ন তোলো, দাও বিদায়…। আজকের সূর্যাস্ত যেন এই গানের সঙ্গেই একাকার।
সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে আছে এমন আনন্দ-বেদনার কাব্য। সেটা বর্ষবিদায়ের বেলায়ও। বিদায় ২০২১। শুক্রবারের (৩১ ডিসেম্বর) সূর্যাস্তের মাধ্যমে আরেকটি খ্রিষ্ট্রীয় বছরের সমাপ্তি হবে। আগামীকালের ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরএকটি নতুন বছর। বলতে হবে-স্বাগত ২০২২!
বছরের এই শেষ দিনটিতে এসে ভালো-মন্দ আর আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো অনেকেই অনেকের মতো করে স্মরণ করবেন। এরই মধ্যে অনেকেই অনেকের টালিখাতাগুলো মিলিয়ে নেবে। মিলিয়ে নিবে লাভ-লোকসানের অংক। তাই জীবন আনন্দময় সুখকর করে রাখতে হবে এবং ভুলে যেতে হবে নেতিবাচক কথাগুলো। আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবে। এছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডগুলো ইংরেজি সালের গণনায় হিসাবে খাতায় তুলে রাখতে হবে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর ভাবনায় নানাভাবে মূল্যায়িত হবে বিদায়ী এই বছরটি।
আমাদের ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় জীবনেও বিদায়ী বছরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকেই ছিল করোনার প্রভাব।আমাদের অনেকেই অনেকভাবে জীবন কাটিয়েছেন, কেউ সুখে বা কেউ দুঃখে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে ২০২১ সালটি খুব একটা ভালো ছিল না। আমাদের অনেকেই ঘরবন্দী অবস্থায় দিন পার করেছি প্রায় পুরো বছর। তারপরও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ঘটনার সমুখ্খীন হয়েছি। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছি।
২০২১ সাল বরণ করেছিলাম সানন্দের সহিত। আমরা কেউ ভাবেনি ২০২১ সাল আমাদের জন্য এতটা ভয়াবহ হবে। আতঙ্ক, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তায় সারা বছর কাটিয়েছি।
কোভিড-১৯ ভাইরাসটি এতটাই ভয়াবহ যে বিশ্ব অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ মাসের পর মাস ঘরবন্দি জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। আশার আলো দেখিয়েছে চিকিৎসা-বিজ্ঞান এবং স্বল্পতম সময়েই আবিষ্কার হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন।
২০২১ সাল বাংলাদেশও পার করেছে ভালো-মন্দ মিলিয়ে। বাংলাদেশও করোনার ধকল মুক্ত হতে পারেনি। তবে যতটা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা হয়তো হয়নি বা অর্থনীতি সেভাবে ভেঙে পড়েনি। অনেকে কর্মহীন হয়েছেন, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। রাজনীতিও অনেকটাই করোনাকবলিত। রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতাও সীমিত।
এদিকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মুজিববর্ষ পালন করার পরিকল্পনা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি করোনার কারণে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ বছরটা আমাদের কাছে খুবই গুরত্বপূর্ণ। তবে যে ভাবে উদযাপন করার কথা ছিল ঠিক সেইভাবে করা না গেলেও জুমের মাধ্যমে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উদযাপন করা হয়েছিল।
সব মিলিয়ে করোনার কারণে ২০২১ সালকে বিদায় জানাতে হয়তো মন ভারাক্রান্ত হবে না। তবে করোনা যে আমাদের পরিবারের সঙ্গে থাকতে শিখিয়েছে, জীবনের নতুন পথ দেখিয়েছে। তাই নতুন বছর ২০২২ সালকে স্বাগত জানাতে হবে ভালো কিছুর প্রত্যাশা নিয়ে।
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ে একান্ত সচিব, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।