Thursday, November 13, 2025
Homeঅপরাধবাংলাদেশে জলবায়ু তহবিলের ২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি : টিআইবি

বাংলাদেশে জলবায়ু তহবিলের ২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি : টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছেন বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নের ৮৯১টি প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশই দুর্নীতি হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

টিআইবি জানায়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। যা প্রয়োজনের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ প্রতিবছর গড়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। যদিও আন্তর্জাতিক তহবিলের বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। কিন্তু সেটিও প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৫১৫ দিন। অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চার বছরের মেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর পর্যন্ত।

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) থেকে মোট ৪৫৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা এসব অনিয়ম রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। একইভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্বের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ ১,৯৫৮ দিন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৯৭৮ দিনে, যা ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।

তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, লুটপাট হয়েছে। এ তহবিলের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে। জবাবদিহিতার ঘাটতি, সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য