গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এবার সাংবাদিকদের জন্য অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা টিকিট কেটে পরিচয় গোপন রেখে পার্কে প্রবেশ করছে। জেব্রা, বাঘ, সিংহসহ বেশ কিছু প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত দল ও বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম পার্কে আসছেন জানতে পেরে বুধবার গণমাধ্যম কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে সেখানে যান। তবে তাদের পার্কের ভেতর ঢুকতে দেয়া হয়নি। পার্কের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এক মাসের ব্যবধানে পার্কে এতগুলো প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনায় সবাই চরম বেকায়দায় রয়েছে। এর মধ্যে ফের এক বাঘ ও এক সিংহ অসুস্থ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়াতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের ব্যাপারে বেশ কঠোর হয়েছেন। পার্কে সাংবাদিক প্রবেশে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা বিরাজ করছে।
তাদের কেন ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বা সাংবাদিকদের প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা জানতে চাইলে পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেন, এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। পরে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও পার্কে ঢুকতে না পেরে গণমাধ্যমকর্মীরা স্থান ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পার্কের আফ্রিকান সাফারিতে ১১টি জেব্রা মারা যায়। পরে সপ্তাহের ব্যবধানে একটি সিংহী মারা যায়। তবে জেব্রার মৃত্যু নিয়ে আলোচনা চলাকালেই একটি বাঘ মারা যাওয়ার খবর চেপে রেখেছিল পার্ক কর্তৃপক্ষ, পরে সেটিও ফাঁস হয়ে যায়। চলতি সপ্তাতে আরও একটি বাঘ ও একটি সিংহ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। জানা গেছে অসুস্থ বাঘ ও সিংহটির অবস্থা সংকটাপন্ন বলে পার্ক কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের এড়িয়ে থাকতে চাচ্ছেন।
একাধিক সংবাদকর্মী জানান, খবর সংগ্রহে পার্কে প্রবেশ করতে টিকিট কেটে ঢুকতে গেলেও তাদের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া, ভেতরে প্রবেশের পর কোনো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ, তারা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।এ বিষয়ে পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্ত দলের বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলা হবে না বলে আমাদের জানিয়েছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সাফারি পার্কে সাংবাদিকদের প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি নিরব থাকেন।
সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণের বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে তদন্ত দল গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবে না বলে আমাদের জানিয়েছিল।
সাংবাদিকদের ধারণা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পার্ক কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ক্ষোভ তৈরি হয়। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্কের অনেক অনিয়ম গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়াতে তারা সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেন। ১১ জেব্রার মৃত্যুর খবর বের করতে এসে ফাঁস হয় বাঘ মারা যাওয়ার ঘটনা। এমন গুরুত্বপূর্ণ খবর পার্ক কর্তৃপক্ষ চেপে রেখেছিল। গোপন খবর ফাঁস হওয়াতেই সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ পার্ক কর্তৃপক্ষের।
পার্কের একাধিক সূত্র জানায়, প্রাণী মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত দলের সদস্যরা দুপুরের একটু আগে পার্কে এসে পৌঁছান। নির্ধারিত সময়ে পার্কের ইরাবতী রেস্ট হাউসের সম্মেলন কক্ষে তারা বৈঠকে বসেন। সূত্র জানায়, দীর্ঘ তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তদন্ত দল বৈঠক করেন। এরই মধ্যে এক সময় দায়িত্বরতদের জানিয়ে দেওয়া হয় পার্কে কোনো সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তদন্ত দল কথা বলবে না। এ সময় পার্কের অনেক কর্মকর্তারাই বৈঠকের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।