Tuesday, June 24, 2025
Homeবাণিজ্যপ্রধানমন্ত্রীর বীমায় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ

প্রধানমন্ত্রীর বীমায় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ


২০২২ সালের ইংরেজী নব-বর্ষের শুভেচ্ছা ও বীমা সেক্টরে শৃংখলা, নৈতিকতা, লুটতরাজ, প্রকাশে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কমিশন বাণিজ্যের মতো আর্থিক অনিয়ম রোধ করে আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বীমা সেক্টরের সাথে জড়িত সকলের আশু দৃষ্টি কামনায় এই লেখা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী বাংলার মানবতার নেত্রী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বীমা শিল্পে কাজ করার আগ্রহ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টায় যখন পূর্ব পাকিস্তানে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল সেই সময়টায় তিনি অত্যন্ত কাছের কয়েকজন সহযোগী নিয়ে বীমার কার্যক্রমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার দায়িত্ব পালন করেন। কারণ বীমায় বহু লোকের সমাগম করার সুযোগ আছে। সেবা দেয়ার অবারিত পথ রয়েছে। মানুষের সান্নিধ্যে এসে আন্তরিক ভাব প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া নিয়ম শৃংখলার সাথে দায়িত্ব পালন করে সহজে প্রচুর পরিমানে বৈধ অর্থ উপার্জনের অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। যা পারিবারিক ও সাংসারিক কাজে খরচ নির্বাহে অন্যতম সহায়ক ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

বীমা শিল্প মানবিক বিবেচনায় আর্থিক খাত উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হলেও এই শিল্পের সাথে সুবিধাভোগী ও স্বার্থন্বেষী মহলের এতো বেশী আনাগোনা চাকুরী জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষমতা লাভের অল্প দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু বীমা শিল্প জাতীয়করণ করেন। যা বেশী দিন নিরবিছিন্নভাবে চলতে পারেনি।
বাংলার মানুষ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই নিজেদের স্বাবলম্বী করার মানসে সকল ব্যবসা বাণিজ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে ব্যাংক বীমার মতো অনেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি মালিকানায় নেয়ার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠে। তারই ফলশ্রুতিতে অনেক রাষ্ট্রীয় অলাভজনক শিল্প, ব্যাংক, বীমার মালিকানা বেসরকারী মালিকানায় ছেড়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হয়।
বীমা শিল্পে প্রায় চার দশক কর্মরত আছি বলে এই শিল্পের বিষয়েই আলোকপাত করতে আগ্রহী যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পেই পারিবারিক বন্ধনের কারণে চাকুরী করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কারণ তিনিও তাঁর পরিবার বঙ্গবন্ধুকে চাকুরীকালীন সময়টাই অন্য সময়ের তুলনায় খুব বেশী কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে নন-লাইফে মোট ৪৬টি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনসহ এবং লাইফে ২টি বিদেশী ও জীবন বীমা কর্পোরেশনসহ ৩৫টি কোম্পানী কাজ করছে। বিদেশী ২টি কোম্পানী লাইফ এবং রাষ্ট্রীয় খাতের সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা বাদ দিলে সর্বমোট ৭৭টি বেসরকারী বীমা কোম্পানী বর্তমানে কাজ করছে। এই সকল কোম্পানীর প্রায় ৮০% আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানবদরদী জননেত্রীর বিশেষ সহানুভূতিশীল রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পেয়েছে।যা বিশ্বের সকল দেশ এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়েও আয়তন ও জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশী।
যার মূল উদ্দেশ্য ছিল আপামর জনগণের কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক ভাবাদর্শে যারা দেশের উন্নয়ণের জন্য অবদান রাখতে চান তাঁদেরই প্রাধান্য দেয়া। এই কোম্পানীগুলোতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, সংসদীয় অডিট কমিটির সদস্যসহ অনেক জনপ্রতিনিধি, বহু জ্ঞানী-গুনী ও শিক্ষিত লোকজন জড়িত থাকা সত্ত্বেও বর্তমান দশকে বীমা শিল্পে কেন অতীতের সব সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থা চলছে তা সবিনয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ যে শিল্পে অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়, সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়, যে শিল্পে প্রতিনিয়ত অডিট, স্পেশাল অডিট, ভ্যাট অডিট, ইনকাম ট্যাক্সের অহরহ ফাইন হয় তবুও কেন বীমা কোম্পানীগুলো থেকে সরকার ও জনগন সুফল পাচ্ছে না। বিশেষ করে যারা আপনার মহানূভবতায় দলীয় বিবেচনায় সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার অংগীকার নিয়ে বীমা কোম্পানী গঠন করেছিলেন। তারাই ক্রমান্বয়ে সরকারের আর্থিক খাতে পঁচন ধরিয়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে বাঁধার সৃষ্টি করছেন।
বীমা কোম্পানীগুলোকে আইনগতভাবে দেখভাল করার জন্য সরকার চৌকষ লোকজন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে নিয়োগ দিয়েছেন। বেসরকারী মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোর জন্য বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন রয়েছেন যার নিয়ন্ত্রণে শ্রদ্ধেয় বয়োজ্যাষ্ঠ ব্যক্তি সকলের মুরুব্বী জনাব শেখ কবির হোসেন স্যার রয়েছেন এবং সকল বীমা কোম্পানীর মালিকগণ বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষক অথচ এই আমলেই লাখ লাখ বীমা কর্মী বেতন পাচ্ছে না, প্রতিনিয়ত ছাঁটাই হচ্ছে, প্রতিনীয়ত লাইফ বীমায় অর্থ আত্মসাতের সাথে পরিচালক ও মূখ্য নির্বাহীগণ জড়িয়ে পড়েছেন। অনৈতিক কমিশন বাণিজ্যে ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়ছে, তাই বীমা ব্যবসা আজ চরম অস্থিরতায় ভুগছে।
যোগ্যতা সম্পন্ন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাগণ চাকুরী পাচ্ছেন না অথচ অযোগ্য লোকজনের চলতি দায়িত্বের মেয়াদ বেড়েই চলেছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যোগ্য মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনি শুরু করা দরকার। কারণ অযোগ্য মূখ্য কর্মকর্তাদের সহায়তায়ই বড় বড় কয়েকটি লাইফ বীমা কোম্পানীর পরিচালকগণ কয়েকশত কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। তাঁরা শুধু কোম্পানীর নয় জনগণের সাথে প্রতারণা করে সরকারকেই প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন করছেন এবং তার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ধীর গতির জন্যই বীমার প্রতি মানুষের আস্থা থাকছে না। বীমা পলিসির আংশিক মেয়াদ শেষে এবং মেচ্যুরিটিতে লাখ লাখ মানুষ টাকা ফেরৎ পাচ্ছেন না। চাকুরীচ্যুত হওয়ার কারণে বীমা কর্মীরা মানব বন্ধন করছেন এই সব কিছুই আপনার জানা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরেক বার ভেবে দেখুন বাবার প্রদর্শিত পথে চলতে গিয়ে বীমায় চাকুরী করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে এই অব্যবস্থাপনার সুরাহা করতে হবে এবং এই দুষ্টচক্রের মূল উৎপাটন করে কঠিন শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ দলকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে না পারে।
সরকারের সহায়ক হিসাবে বীমা শিল্পে আস্থা আর বিশ্বাসের ক্ষেত্র তৈরীতে আসুন আমরা বীমা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ লোভ-লালসা ত্যাগ করে দেশ মাতৃকার উন্নয়নে কাজ করি। বীমা ব্যবসা হউক ব্যক্তির আর্থিক ও সম্পদের নিরাপত্তার সোপান। লেখক: মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য