মোঃ রফিকুল ইসলাম
চোর শোনে না ধর্মের কাহিনী। কথায় বলে না চোরের আবার ধর্ম কি? ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি এই প্রবাদ বাক্যটি। অপ্রিয় হলেও সত্য আজ তা পদে পদে টের পাচ্ছি।
ছোট বেলা অনেক থিয়েটার (যাত্রা) দেখেছি। থিয়েটারে নাকি বারো জাতি না হলে থিয়েটার চলে না। কথাটি সেদিন বুঝতে পারিনি। কারণ আমার ঐ সময় বুঝার বয়ষ বা বুদ্ধিও ছিল না বা কাউকে শেয়ারও করতে পারিনি।
যা হোক আজ পুরানো স্মৃতির কিছু লিখার চেষ্টা করছি মাত্র। অনেকের কাছে ভালো লাগতে পারে আবার নাও ভালো লাগতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। আমাকে অনেকেই ভালোবাসেন আবার অনেকে ভালোবাসতে নাও পারেন। তবে লিখা পড়া অন্য জিনিস হলেও আমাদের দেশে ছোটদের মূল্যায়ন কম। ছোট বেলায় দেখেছি শীত এলেই থিয়েটার হতো এবং তা সারা রাত চলতো। মাঝে মাঝে মানুষ ঘুমিয়ে যেতো বা কারো চোখে তন্দ্রা ভাব দেখা দিতো তখনই নর্তকীরা পায়ে নুপুরের ঘন্টা জুলিয়ে ষ্টেইজ কাপানো ডেন্স দিয়ে মানুষের ঘুম ভেঙ্গে দিয়ে আবার স্বাভাবিক করে দিয়েছিল। কথায় আছে বারো জাতের মানুষ না হলে থিয়েটার চলে না। কারণ থিয়েটারে নতুনত্ব কিছু না দেখাতে পারলে শ্রোতা পাওয়া যায় না। তাই বিভিন্ন পেশার মানুষের সমাগম হতে হয়। তবে তা আজ বিলুপ্তির পথে। আগের মতো আর দেখা যায় না। বরিশালের লক্ষণদাসের সেই শিকারী হাতিও নেই আর ফরিদপুর মাদারীপুরে সেই নর্তিকীও নেই।
এছাড়া দেশ যেমন ডিজিটাল রূপ নিয়েছে তেমনি মানুষ ডিজিটাল পদ্বতী বেছে নিয়েছে। মানুষ আইডিয়েল সময় নষ্ট করতে চায় না। মানুষের জীবন আজ যান্ত্রিক। পেছনের দিকে তাকানোর সময় নেই। মানুষ পার্থিব জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এক হাতে খাচ্ছে আর অন্য হাতে মোবাইল বা লেপটপ চালাচ্ছে।
স্বাধীনতার সময় আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম, হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, এক হও। কিন্তু আজ তার পরিবর্তন। আমরা একই দেশের নাগরিক। একই স্কুল কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনা করেছি। চাকুরীর ক্ষেয়ে সবাই ইন্টারভিউ দিয়েছি। পরীক্ষায় যিনি ভালো করবে তিনিই চাকুরী পাবেন। আমরা কেন চাকুরী দাতাকে ঘুষ দিতে যাচ্ছি। কেন ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিচ্ছি। এটা জাতির কাছে আমার প্রশ্ন।
দিন দিন মানুষ মানুষের প্রতি ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। কেউ কাউকে শ্রদ্ধা করে না। আগেকার মতো সালাম বিনিময় হয় না। মাঝে মধ্যে খবরের কাগজে দেখা যায় অমুকে অমুক বিদ্যালয় বা কলেজ শিক্ষককে মারপিট করেছে। ছিঃ লজ্জা। যিনি মানুষ গড়ার কারিগর তাঁকেই যদি তাঁর হাতে গরা ছাত্রটি মারপিট করে বা লাঞ্চিত করে। পৃথিবীতে এর থেকে দুঃখজনক বা লজ্যাজনক আর কি হতে পারে।
মানুষ কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। আপন জন্মদাতা পিতা মাতাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয় এমনও দেখা যায় তাঁদের উপর হাত পর্যন্ত তুলে। এটা কিয়ামতের লক্ষণ। শুনেছি কিয়ামতের শেষ বিচারে সবাই ইয়া নাফছি, ইয়া নাফছি বলবে শুধুমাত্র আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ইয়া উম্মুতি, ইয়া উম্মুতি বলবেন। কিন্তু আজ আমরা সেই অদেখা কিয়ামতের আলামত এই দুনিয়াতেই দেখতে পাচ্ছি।
নবী মুহাম্মদ (সঃ) ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছিলেন কিয়ামতের পূর্বে কি ঘটতে পারে আজ তারই লক্ষণ দেখছি যাকে আমরা পুর্বলক্ষণ বলে থাকি। আজ আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। যেমন: খাওয়া খাদ্যের স্বাদ কমে যাবে, ভাই ভাই, বোনে বোনে সম্পর্ক থাকবে না। মানুষ পরের সম্পদ ভক্ষণ করবে, ওজনে কম দেবে। নারীর চলাচলে পর্দা থাকবে না। নারীরা হাটে বাজারে, রাস্তাঘাটে, অফিস আদলতে আনা-গোনা করবে। আজ তাই হচ্ছে। এক সময় মসজিদের মাইকে আযান দেয়া হলে মেয়ে লোকেরা মাথার গোমটা টেনে দিতো। আজ তা পালন হচ্ছে না। কেমন যেনো সব যায়গায় মানুষে মানুষে ধর্মে ধর্মে দুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার এক স্যার বলেছিলেন আগামী পঞ্চাশ বছর পর ধর্ম কী তা পালন হবে কিনা সন্দেহ। তার কথাটি ধীরে ধীরে সঠিক হতে চলেছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন “অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা” তাঁর কথার মর্ম অনেক গভীরে। কিন্তু আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। আমাদের বিবেক কাজে লাগছে না, আমাদের বুদ্ধি কাজে আসছে না। দিনে দিনে আমরা গোমরাহি হয়ে যাচ্ছি। আমাদেরকে উপদেশ দিলেও আমরা তা পালন করছি না। ফলে আমাদের অবনতি ছাড়া ভালো কিছু অর্জন করতে পারছি না।
আমাদের এখনও সময় আছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার। আমি নিজে পরিশুদ্ধ হবো এবং অপরকে শুদ্ধ হওয়ার জন্য উপদেশ দেবো। তবেই সমাজ, দেশ ও জাতি শুদ্ধ হবো। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় সকল অফিস আদালতে “শুদ্ধাচার” থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিমাসে একবার হলেও নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সারা মাসের কর্মের যাচাই ও সঠিকতা প্রমাণ করার কথা বলেছিলেন।
কথায় আছে কাগজে কলমে গোয়ালের গরু থাকলেও বাস্তবে নেই। যে দেশে উন্নয়নের জন্য বাজেট হয়। দুঃখের বিষয় বাজেটের টাকা অনুমোধন দিনতে পারসেনটিজ দিয়ে কাজ ভাগিয়ে আনতে হয়। সেদেশে কি উন্নয়ন। যিনি পারসেনটিজ দিয়ে কাজটি এনেছেন তিনি নিজে শ্রম দিবেন। শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে কাজটি উঠাবেন। প্রথমেই যদি পারসেনটিজ দিতে হয় সে তখন রড সিমেন্টের পরিবর্তে বাশ ও ছাই বা মাটি দিবেন এটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ লাভের গুর পিপড়ায় খাওয়ার মতো।
আমরা অভাগা জাতি আমাদের অভিবাবকের অভাব। দেখবালের মানুষ নেই। আজ আমরা সবাই নেতা। কে কার কথা শুনবে কে কাউকে শ্রদ্ধা করবে। সবই সমান। পরিশেষে, আসুন আমরা সমাজটাকে পরিবর্তন করি। আমরা নিজেরা নিজেদের অন্তরকে স্বাক্ষী রেখে ওয়াদাবদ্ধ হই। এখন থেকে আর ঘুষ, সুদ এবং সমাজবিরোধী কোন কাজে লিপ্ত হবো না এমনকি কেউ আমাদের সামনে অনৈতিক কোন কাজ করে তাকে বাধা দেবো। তবেই সমাজ পরিবর্তন হবে। লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম। এপ.এস. টু সিইও এন্ড চেয়ারপার্সন। ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ।